বিশেষ প্রতিনিধি, যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যারা আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনীতি করেন বা সমর্থক তারা একে অন্যকে দুষছেন। কিন্তু সাধারণ প্রবাসীরা বলছেন, ভিসানীতির জন্য দায়ী রাজনীতিবিদরা। তাদের কারণেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
এখানে উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা বা এ ধরনের বিষয়ে জড়িত থাকা অন্যদেরও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হতে পারে। এর আগে, গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ভিসানীতি ঘোষণা দেয়। ঘোষণা অনুযায়ী, নির্বাচনে কারচুপি, ভীতি প্রদর্শন এবং নাগরিক ও গণমাধ্যমের বাকস্বাধীনতায় যারা বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসা বিধি-নিষেধ দেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশের মানুষের সঙ্গে প্রবাসীরাও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, রাজনীতিকদের এক টেবিলে বসে সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্তও তাদের টনক নাড়াতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির বিধি-নিষেধ কার্যকর হওয়া শুরু হয়েছে। তারা বলেছেন, এই বিধি-নিষেধ দেশের জন্য লজ্জাজনক। এজন্য দায়ী রাজনীতিবিদরা।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক দুলাল মিয়া এনাম ইত্তেফাককে বলেন, এই বিধি-নিষেধ আওয়ামী লীগের জন্য সুবর্ণ সুযোগ এনে দেবে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচারের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি আরোপ করা হয়েছে।
নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নূরুল আমিন বাবু ইত্তেফাককে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির ফলে বিরোধী দলে কোনো আন্দোলনে আর জ্বালাও-পোড়াও করবে না। দেশের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ ভিসানীতি বিএনপির জন্য খারাপ হলে বাংলাদেশের জনগণের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধি-নিষেধের ঘটনাটি দেশের জন্য লজ্জা ও অপমানজনক। বর্তমান সরকার জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চায়।বিএনপি দীর্ঘদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছে। কিন্তু সরকারের স্বৈরাচারী ও একঘেঁয়েমি মনোভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি আরোপ করতে বাধ্য হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবদলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবু সাঈদ আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ধীরে ধীরে অন্যান্য উন্নত দেশও বাংলাদেশকে ভিসা বিধি-নিষেধ দেবে। আর এত দেশের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, সরকারের সাহস থাকলে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিক। কোথাও সহিংসতা হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ভিসানীতি প্রত্যাহার করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র। তাই ভিসা বিধি-নিষেধের দায়ভার সরকারের ওপর বর্তায়।
নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি আতাউল রহমান শিপলু বলেন, যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন কিংবা অন্য বিষয়ে সমস্যা দেখা দিলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়। সেটাই রীতি। কিন্তু আমাদের দেশের নেতা-নেত্রীরা মুখোমুখি হতে চান না। দিন দিন দেশের রাজনীতি অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। আগামী নির্বাচনে সংঘাত অনিবার্য। আর এ সুযোগে বিদেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। এটা দুঃখজনক। রাজনীতিবিদদের জন্য লজ্জার।
ভিসানীতি নিয়ে যা ভাবছেন বিশেষজ্ঞরাভিসানীতি নিয়ে যা ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা
নিউ জার্সির বাসিন্দা সুকুমার রায় তপন বলেন, এই বিধি-নিষেধ বাংলাদেশের জন্য লজ্জাজনক। আমরা দেশে একটি সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আশা করতে পারি। যদি না হয় তাহলে ভিসানীতির আওতা ভবিষ্যতে আরো বড় হতে পারে, যা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। প্রবাসী হিসাবে আমরাও লজ্জিত হবো।
নিউ ইয়র্কের হলিসের বাসিন্দা ও মূলধারার রাজনীতিক বিলকিস নাহার ঝর্ণা বলেন, নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেক সুনাম রয়েছে। বাংলাদেশিরা মূলধারার রাজনীতিতেও ভালো করছে। কিন্তু বাংলাদেশের অসহিষ্ণু রাজনীতির কারণে প্রবাসে আমরা ছোট হয়ে যাচ্ছি। এরপর যখন ভিসা বিধি-নিষেধ তখন আমাদের মাথা নিচু হয়ে যায়। তিনি বলেন- প্রবাসীর পাঠানো রেমিট্যান্সে অর্থনীতির চাকা সচল হচ্ছে। কিন্তু প্রবাসীদের কথা একবারও ভাবেন না দেশের রাজনীতিকরা। তারা শুধুই ক্ষমতার রাজনীতি করেন। তারা নতুন প্রজন্মের কথা ভাবেন না। এই রাজনীতি দেখে তারা কী শিখছে? তারা জানছে বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যে দেশকে সুষ্ঠু নির্বাচনের শর্ত দিয়ে ভিসানীতি আরোপ করে বিদেশি রাষ্ট্র