চলতি মাসেই ভোটের হিসাব চুকাতে চায় দুই দল

চলতি মাসেই ভোটের হিসাব চুকাতে চায় দুই দল

চলতি অক্টোবরেই ভোটের হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে নিতে বেশ ব্যস্ত দেশের প্রধান প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান চাইছে দল দুটি। আর সব যদি ঠিক থাকে তাহলে নভেম্বরেই ঘোষণা হবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির ব্যাপারে বিপরীতমুখী অবস্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি। ভিসানীতির ব্যাপারে আওয়ামী লীগের মনোভাব নেতিবাচক হলেও এর ঠিক বিপরীত অবস্থানে বিএনপি। এ অবস্থায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের রাজনীতিতে দেশ নিয়ে প্রধান দুটি দলই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মনোভাব স্পষ্টভাবে জানার অপেক্ষায়।

বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর প্রয়োজন মনে করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা প্রসঙ্গ উঠে আসতেই ক্রমশ দূরত্ব বাড়ছে দল দুটির। তাকে দেশের বাইরে পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারছে না বিএনপি। দলীয় প্রধানকে বিদেশ পাঠানোর জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়া হলেও নির্ধারিত সময় পর তাদের নীরবতাকে দুর্বলতা হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ।

এ পরিস্থিতিতে প্রায় মহলেই প্রশ্ন―এ অক্টোবরে রাজনীতির মাঠে কী হবে, সমঝোতা না সংঘাত? নাকি ভিন্ন কিছু? বিএনপি জানিয়েছে, এ অক্টোবরেই বর্তমান সরকারের পতন হবে। আর আওয়ামী লীগ বলেছে, সরকারের উন্নয়নের চমকে এই অক্টোবরেই কবর হবে বিএনপির রাজনীতির।

আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন শুধুই দুই দলের যেমন দূরত্ব বাড়ছে, একই সঙ্গে অস্থিরতা তৈরি করছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের ভাষ্যমতে, তফসিল ঘোষণার আগেই চলমান সমস্যার সমাধান করতে হবে। কিন্তু সমস্যা সমাধানে এখনো কোনো আভাস দেখা যাচ্ছে না। দু’দলই তাদের অবস্থানে অটল।

ক্ষমতাসীন দল সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই নির্বাচন আয়োজন এবং অংশগ্রহণে অটল। কিন্তু প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল বিএনপির অবস্থান ভিন্ন। এ দল কোনোভাবেই প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না। আর এই সমস্যা ঠিক কতদিন চলবে কিংবা কখন এর সমাধান হবে, তা নিয়েই এখন যত জল্পনা-কল্পনা। তবে সব সমস্যাই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আস্থার পরিবেশ না থাকলেও রাজনীতিতে সংলাপের ভূমিকা রয়েছে। যদিও আগের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কিন্তু তাতে সমাধান আসেনি। তারপরও সংলাপের বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, এবারও সরকারি দলের পক্ষ থেকে সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনের পরিবেশ আরও সুন্দর করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এতে বিরোধী দলের আস্থা আসবে। সংকটও কেটে যাবে। আর বিদেশিরা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক যে নির্বাচনের কথা বলছে, এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচনের জন্য উদ্যোগী হতে হবে সরকারকে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শুধু সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হতে পারে। সংকট নিরসনে এর কোনো বিকল্প নেই। দেশের মানুষও সংলাপ চায়। তবে এ সংলাপ হতে হবে শর্তহীন। আর সমস্যার যদি সমাধান না হয় তাহলে একতরফা নির্বাচন হবে। এতে অস্থির পরিবেশ হবে। যা কখনোই কাম্য নয়। বিদেশিরা ভোটাধিকার ও মানবাধিকার নিয়ে কথা বলতেই পারেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান আমাদেরই করতে হবে। সেটিও অবশ্যই বাইরে থেকে নয়।

এদিকে সংলাপের ক্ষেত্রে শর্তজুড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকারের পদত্যাগের সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নেয়ার পরই হতে পারে সংলাপ। কিন্তু এ প্রস্তাব মানতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের দাবি থেকে বিএনপি যদি সরে আসে তবেই সংলাপ হতে পারে।

দুই দলের এ বক্তব্যে এটা স্পষ্ট, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শর্তহীন সংলাপে রাজি নয়। ফলে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য করছেন উভয় দলের শীর্ষ নেতারা। এ অবস্থায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ যে পথে চলছে তাতে ধ্বংস হয়ে যাবে তারা। এই আওয়ামী লীগের পতন অক্টোবরেই হবে। আর এর জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, সরকারের উন্নয়নের চমকে অক্টোবরেই কবর হবে বিএনপির।

বিএনপির আন্দোলন : আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে অক্টোবরজুড়ে রাজপথে সক্রিয় থাকার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দুটি দলই ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করছে। তফসিল ঘোষণার আগেই সরকার পতনের এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে চাইছে বিরোধী দল বিএনপি। এ দল রোডমার্চ ও সমাবেশের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর কৌশল নেবে। নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা রাখার জন্য মাঠ দখলে রাখতে চাইছে।

আন্দোলন পরবর্তী ধাপে সরকার পতন ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি বাস্তবায়নে কঠোর কর্মসূচির ব্যাপারেও নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। এ জন্য সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওসহ অবস্থান ও হরতালের মতো কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে। আর এসবই নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ার ওপর। এ অবস্থায় যদি আন্দোলনকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে বন্ধ করার চেষ্টা করা হয় তাহলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপি ও সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর।

সরকারের উন্নয়ন ও সমাবেশ : এদিকে অক্টোবরজুড়ে সরকারের উন্নয়ন প্রদর্শনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে আওয়াম লীগ। এ মাসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল, বঙ্গবন্ধু টানেল এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন করা হবে। এসব উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধনের পর জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আগামী ৭ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন করা হবে। ওই দিন বিমানবন্দর এলাকায় আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। ১০ অক্টোবর উদ্বোধন করা হবে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা ট্রেন চলাচল। উদ্বোধনের দিন ফরিদপুরে ভাঙ্গা স্টেডিয়ামে আয়োজিত সমাবেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এ সমাবেশে পাঁচ লাখ মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এছাড়া ২০ অক্টোবর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল এবং ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনের পর জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ