দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। হ্যাটট্রিক সময় পার করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর দু’মাস পরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ঠিক সেই মুহূর্তে বাংলাদেশে বিরাজ করছে রাজনৈতিক উত্তেজনা। যুক্তরাষ্ট্র ভীসা নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম শুরু করেছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তার জীবনাশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বারবার নেয়া হচ্ছে সিসিইউতে। জার্মানিতে চিকিৎসার জন্য বড় একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন আগামী জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু দেশে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে কি-না, তা এখন বড় প্রশ্ন।
এ ছাড়া সংকটময় পরিস্থিতিতে তৃতীয় শক্তি ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ পেতে পারে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। সব কিছু এড়িয়ে হাবিবুল আইয়াল কমিশন নির্বাচনের আয়োজন করলে সেই নির্বাচনে কি বিএনপি অংশ নেবে? বা এ দলের জোটসঙ্গীরাও কি ভোটে যাবে… অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া তা কি আদৌ সম্ভব হবে? শক্তিশালী বিরোধী ব্যতীত নির্বাচন কি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাবে? এ সব প্রশ্ন ও সংকট অক্টোবরেই নির্ধারিত হতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। পর্দার আড়ালে আসতে পারে সব ধরনের সমাধান।
রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। সরকারের সঙ্গে জার্মানিতে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও চারটি দেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে গতকাল আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেছেন, রোববারের (আজ) মধ্যে স্পষ্ট হবে খালেদা জিয়া কবে বিদেশ যাবেন। অক্টোবরের প্রথম শপ্তাহে এ বিষয়টির সুরাহা হয়ে যাবে। নির্বাচনি যে সংকট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, কিছু সময় রাজনৈতিক সংস্কারের যে বিষয়টি পর্দার আড়ালে কথোপকথন হচ্ছে— এ বিষয়টিও অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় প্রায় স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। দেশের মানুষ প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে, নির্বাচন কী আদৌ হচ্ছে নাকি দেশে অন্য কিছু ঘটছে। কূটনীতিতে পর্দার আড়ালে যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে, দিন শেষে সফলতা কতটুকু— তাও দেশের মানুষের কাছে খুব একটা অজানা থাকবে না।
বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা যে আন্দোলন করছে এক দফার, সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন— এ আন্দোলনেরও আউটপুট ঘরে তুলবে তারা। হরতাল-অবরোধসহ শক্ত কর্মসূচিরও ইঙ্গিত দিয়েছে তারা। দেশে রাজনীতিতে বিচ্ছিন্ন ঘটনারও জন্ম হতে পারে এ মাসেই। আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বিএনপিকে একেবারে মাঠ ছেড়ে দেবে না। শক্তি পরীক্ষা ও রাজনীতির বিজয়ের মাসও কেউ কেউ দেখছেন। রাজনৈতিক সূত্রগুলো এ-ও বলছে, প্রধানমন্ত্রীর লম্বা সময় বিদেশ সফরে রাজনৈতিক কোন বিষয়টি মানুষের জন্য অপেক্ষা করছে তা-ও সামনে চলে আসবে। অন্তরালে অনেক বৈঠকই হয়েছে সেগুলো ধীরে ধীরে এই মাসে বাস্তবায়ন হতে পারে। নির্বাচন আগ মুহূর্তে আগামী নির্বাচনের সব ভাগ্যের খাতার হিসাবও জানা যাবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে একটি রাজনৈতিক সংকটের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচন না হওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নানা অঘটনের খবরও শোনা যাচ্ছে। বিরোধীদের হার্ডলাইন ও সরকারের ছাড় না দেয়ার দৃশ্যপট দেখা যাচ্ছে। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে দেশে নির্বাচন নিয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপে অনেক অজানা খবরের জন্ম হতে পারে এই অক্টোবরের মধ্যে। নির্বাচন পূর্ব সময়ে একটি পরিবর্তনের মাস হিসেবে রাজনীতি, কূটনীতি সব কিছুর গুরুত্ব বহন করবে অক্টোবর যাত্রা। জানতে চাইলে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে অক্টোবরের মাসটি ভাগ্য নির্ধারণের মাস। এ মাসে অনেক ঘটনার জন্ম হতে পারে। অনেক কিছুই স্পষ্ট হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের অধীনেই কী দেশে আবার নির্বাচন হবে নাকি গ্রহণযোগ্য একটি সরকার গঠন হয়ে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন— তা এ মাসেই জানা যাবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘অক্টোবর থেকেই আগামী নির্বাচন ঘিরে দেশে একটা অচল অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। বিদেশি প্রভাব ও দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ মিলে সঠিক সময়ে নির্বাচন হবে না বলেই আমার মনে হচ্ছে। এ ছাড়া নির্ধারিত তারিখে স্বাভাবিক নির্বাচনও নাও হতে পারে। নানাভাবে দেশে অসন্তোষ দেখা দেবে।’ বিরোধীদল ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে দেশে কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) সরকার নয়, সেনাসমর্থিত সরকার গঠনের চেষ্টা করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন এই বিশ্লেষক।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ‘আমরা এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করব না। আমরা আন্দোলনে আছি। অক্টোবরেই আমরা চূড়ান্ত আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলব। এ দেশের মানুষ আর এই সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। আমাদের যে তীব্র আন্দোলন হবে দেশের মানুষ তাতে অংশগ্রহণ করবে। আপনারা জানেন আমাদের নেত্রী ভালো নেই। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন। যা এ দেশে সম্ভব নয়। তার জন্য প্রয়োজন দ্রুত বিদেশে নিয়ে যাওয়া। আমরা দাবি ও আন্দোলন করছি।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শক্তি কখনোই ক্ষমতার পরিবর্তন করতে পারবে না। এ দেশের ক্ষমতার মালিক দেশের জনগণ। মানুষ শেখ হাসিনার ওপর আস্থাশীল। বিদেশিদের কোনো হুমকিতেই লাভ হবে না। বিএনপি যদি রাজপথে কোনো অগ্নিসন্ত্রাস করতে চায় আমরা ছেড়ে দেবো না। বিএনপিকে অবশ্যই প্রতিহত করব।’