সিএসআর খাতে ৪৪ কোটি টাকা ব্যয় কমিয়েছে ব্যাংক

সিএসআর খাতে ৪৪ কোটি টাকা ব্যয় কমিয়েছে ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

সামাজিক দায়বদ্ধতা (করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি বা সিএসআর) খাতে ব্যয় কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত) সিএসআর খাতে ব্যাংকগুলো ব্যয় করেছিল ৬১৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। চলতি বছর একই সময়ে ৫৭১ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। সে হিসাবে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা ব্যয় কমিয়েছে ব্যাংকগুলো।

এ হিসাবে গত বছরের তুলনায় ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসের ব্যাংকগুলো সিএসআর খাতে ব্যয় কমিয়েছে ৪৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিএসআর সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আলোচিত সময়ে ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে স্বাস্থ্য খাতে। এরপর ব্যয় করেছে দুর্যোগ ও শিক্ষা খাতে। এ ছাড়া পরিবেশ জলবায়ু ও অবকাঠামো উন্নয়নে শত কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছে ব্যাংকগুলো।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, জানুয়ারি-জুন ২০২৩ ষাণ্মাসিকে দেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে স্বাস্থ্য খাতে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ২১৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। হিসাব অনুযায়ী এই অঙ্ক মোট সিএসআর ব্যয়ের ৩৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকগুলো দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতের আওতায় সিংহভাগ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। এ খাতে ব্যাংকগুলো ব্যয় করেছে ১০৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। হিসাব অনুযায়ী, মোট সিএসআর ব্যয়ের ১৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ এ খাতে ব্যয় করা হয়েছে। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকগুলো তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে শিক্ষা খাতে ৯০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। যা মোট সিএসআর ব্যয়ের ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। শিক্ষা খাতের ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংকগুলো কর্তৃক বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানকল্পে সিএসআর ব্যয় করা হয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ প্রদান এবং শিক্ষা খাতের অবকাঠামো উন্নয়নেও অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট তহবিলেও অনুদান দিয়েছে।

পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন-অভিযোজন খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ৪৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। যা মোট সিএসআর ব্যয়ের ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এ ছাড়া সিএসআর ব্যয়ের একটি উল্লেখযোগ্য খাত হলো ক্রীড়া ও সংস্কৃতি। এ খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ৩০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

ব্যাংকগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আয়-উৎসারী কার্যক্রম খাতে সিএসআর ব্যয় যথাক্রমে ৫২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ৪ কোটি ৯২ লাখ। অন্যান্য খাতে ব্যয় করেছে ২১৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এ অঙ্ক মোট ব্যয়ের ৩৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি ব্যাংকের চেয়ে বেসরকারি ব্যাংকে সিএসআর ব্যয় বেশি হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক মিলে ৪ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। বেসরকারি সব ব্যাংক ৫৫১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। যা মোট ব্যয়ের ৯৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। বিদেশি সব ব্যাংক ১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা সিএসআর খাতে ব্যয় করেছে।

সিএসআর ব্যয়ে শীর্ষে রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্যয় করেছে ৬১ কোটি ৩২ লাখ টাকা, দ্বিতীয় ইসলামী ব্যাংক, ব্যয় করেছে ৪৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা, আল-আরাফাহ ব্যাংক, ব্যয় করেছে ৪২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ৩৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং যমুনা ব্যাংকের সিএসআর ব্যয় ৩৮ কোটি টাকা।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান সিএসআর খাতে কোনো টাকা ব্যয় করেনি।

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ সংবাদ