দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে কৌশলের পরিবর্তন করছে আওয়ামী লীগ। কয়েকটি ইস্যুতে দলের নেতাদের এখন থেকে সতর্কতার সঙ্গে কথা বলতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি, নিষেধাজ্ঞা, বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়া, মানবাধিকার ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে কথা না বলতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আক্রমণাত্মক ও নেতিবাচক বক্তব্য থেকে আপাতত বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দলীয় নেতাকর্মীদের। দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা এরইমধ্যে এই বার্তা কেন্দ্র থেকে তণমূল নেতাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর আগে বিষয়টি নিয়ে নেতাকর্মীদের বিশেষ বার্তা দেন। দলের নেতাদের বেফাঁস কথা না বলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দরকার শুধু ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং বেফাঁস কথা না বলা। যার যা মুখে আসে বলে দেয়, চিন্তা করে না। এই কথাটা আমাদের কতোটা উপকারে আসছে আর কতোটা ক্ষতি হচ্ছে। সুতরাং বক্তব্য বিবৃতিতে সতর্ক থাকা উচিত। তিনি বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পবিত্র সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে।
কোনো অপশক্তিই এই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। অসাংবিধানিক ও বেআইনিভাবে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দু’জন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগের প্রধান কৌশল হলো সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করা। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এই নির্বাচন যেকোনো মূল্যে অনুষ্ঠান করতে চায়। আর নির্বাচন যেন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয় সেটির সব আয়োজন তারা সম্পন্ন করবে। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দলীয় অনেক বর্মসূচি পালন করা হবে। এসব কর্মসূচি নিয়েও একটি কৌশল র্নিধারণ করা হয়েছে। যদিও পরিস্থিতি অনুযায়ী কৌশল অবলম্বন করা হয়। তবে আপাতত কিছু বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনমুখী রাজনীতি। আওয়ামী লীগ ভিসা নীতিকে এড়িয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পক্ষে একটি আবহ তৈরির জন্য বক্তব্য রাখবে। যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির মূল বক্তব্য হচ্ছে নির্বাচনকে যারা বাধা দেবে তাদেরকে ভিসা নীতির আওতায় আনা হবে। সেই জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যেন নির্বাচনের পক্ষে বক্তব্য রাখে। কৌশলের আরেকটি দিক হলো-আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে তারা যেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোনো বক্তব্য বিবৃতি না দেয়। বিএনপি’র নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে যে কৌশল নির্ধারণ করেছে সেটা হলো- আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে দেয়া হবে না বা বিএনপিকে প্রতিহত করা হবে এ ধরনের কোনো বক্তব্য তারা যেন না দেয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই যেন মানবাধিকার ক্ষুণ্ন্ন হয় বা মানবাধিকারের বিরুদ্ধে যায় এই ধরনের বক্তব্য পরিহার করেন।
এসবের পাশাপাশি নির্বাচনে যেন ভোটারদের উপস্থিতি ভালো হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে নেতাকর্মীদের। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অন্তত ৬০ ভাগ ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। এই কারণেই আওয়ামী লীগ পাড়ায় মহল্লায় কমিটি করছে এবং যারা প্রার্থী হবেন তাদেরকে প্রথম শর্তই দেয়া হবে যে, ভোটার যেন উপস্থিত হয়। নির্বাচনে যেন কোনোরকম কারচুপি বা অনিয়মের প্রশ্ন না ওঠে। আওয়ামী লীগ মনে করছে, ৫০ ভাগের বেশি ভোটার উপস্থিত থাকলেই সেই নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না। দলীয় নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান লক্ষ্য হলো সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা। কোনো অবস্থাতেই যেন নির্বাচন বাধাগ্রস্ত না হয় সেটাই ক্ষমতাসীন দলের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগ মনে করছে, সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে।
দলীয় নেতাকর্মীদের এ ধরনের নির্দেশনা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, আমরা অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে চাই। কোনো ধরনের উউচ্ছৃঙ্খল আচরণ বা কথাবার্তা তৈরি করে বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাই না।
তিনি বলেন, আমরা ধীরস্থিরভাবে শান্তিপূর্ণভাবে সামনের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চাই। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এরইমধ্যে যৌথ সভায় এ নিয়ে বিশেষ বার্তা দিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীদের। অযথা কোনো বক্তব্য দিয়ে যেন বিতর্কের কোনো ইস্যু তৈরি না হয় আমরা সেই দিকটা বিশেষভাবে নজর রাখার কথা বলেছি। সামনে যেহেতু নির্বাচন সেজন্য দলীয় কিছু কৌশল তো থাকবেই আমরা সেইসব কৌশলের সফল বাস্তবায়ন করতে চাই।