তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারবিরোধী দলগুলোকে সাথে নিয়ে ঢাকায় বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে বিএনপি

তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারবিরোধী দলগুলোকে সাথে নিয়ে ঢাকায় বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে বিএনপি

 

 

তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারবিরোধী দলগুলোকে সাথে নিয়ে ঢাকায় বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে বিএনপি। সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় হওয়া না পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে এমন পরিকল্পনার কথা জানা গেছে।
জানা গেছে, বৃহত্তর ও লাগাতার কর্মসূচির আগে ঢাকায় বড় সমাবেশ থেকে দাবি মানতে আলটিমেটাম দিতে পারে বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা। ২০ অক্টোবরের আগেই এই সমাবেশ হতে পারে। দুর্গাপূজা শেষ হওয়া পর্যন্ত এ আলটিমেটাম চলতে পারে। দাবি না মানলে পূজার পর থেকে চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে পা রাখবে বিএনপি, যা আগামী নভেম্বর মাসের প্রথমে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত এমনকি তফসিলের পরেও চলতে পারে। এর আগে ঢাকায় যুব ও ছাত্র কনভেনশন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর স্মারকলিপির কর্মসূচিও দিতে পারে বিএনপি। সরকারকে আলটিমেটাম দেয়ার আগে চলতি মাসে পর্যায়ক্রমে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। তবে এই সময়ের মধ্যে ফাঁকে ফাঁকে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচিও চলতে থাকবে।

এক দফা দাবিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপে এখন রোডমার্চ ও সমাবেশের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম অঞ্চলে রোডমার্চের মধ্য দিয়ে এ পর্যায়ের কর্মসূচি সমাপ্ত হবে। এরই মধ্যে রাজধানী ও এর আশপাশের জেলায় আটটি সমাবেশ হয়েছে। রোডমার্চ হয়েছে চারটি। এ ছাড়া ঢাকায় মহিলা সমাবেশ, শ্রমিক কনভেনশন ও কৃষক সমাবেশ হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকায় পেশাজীবী কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবিতে গত ১২ জুলাই থেকে এক দফার আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। দলটির নেতাদের মূল্যায়ন, এসব কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল। শ্রমিক কনভেনশনের মধ্য দিয়ে এক দফার চলমান আন্দোলনে আগামীতে শ্রমিক শ্রেণীর অংশগ্রহণ আরো বাড়বে। এতে করে আন্দোলন আরো বেগবান হবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় বিএনপির রোডমার্চ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। অথবা প্রথম ধাপের কর্মসূচি শেষে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেও ঘোষণা করা হতে পারে আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপের আংশিক কর্মসূচি। গত কয়েকদিনে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে যুগপতের শরিকদের সাথে ধারাবাহিক বৈঠক করে বিএনপি। তাদের দেয়া বিভিন্ন প্রস্তাবনা সমন্বয় করে চূড়ান্ত আন্দোলন পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে দলটি।

বিএনপির সূত্র জানায়, প্রথম ধাপের কর্মসূচি শেষে ৭ অক্টোবর থেকে চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলন শুরু হতে পারে। ১৮ অক্টোবরের দিকে সরকারকে পদত্যাগে আলটিমেটাম দেয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও কিছু কর্মসূচি হতে পারে। তবে আলটিমেটাম শেষে কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। তখন সারা দেশের নেতাকর্মীরা ঢাকার কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। এর আগে গত ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় এক দিন পিছিয়ে পরদিন ২৮ জুলাই নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ওই মহাসমাবেশ করে দলটি। সেখান থেকে সরকারকে পদত্যাগে আলটিমেটাম দিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর পরিকল্পনা ছিল বিএনপির হাইকমান্ডের। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ওই পরিকল্পনা থেকে সরে এসে ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছিল দলটি। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশের মারমুখী ভূমিকা এবং নেতাকর্মীরা ব্যাপক হারে রাজপথে না নামায় তখন ওই কর্মসূচি সফল হয়নি। চূড়ান্ত আন্দোলন সামনে রেখে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে কিছু সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেয় দলটি। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই চূড়ান্ত আন্দোলন পরিকল্পনা সাজিয়েছে দলটি।

জানা গেছে, চলতি অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকায় এক দফার যুগপৎ আন্দোলন বেগবান করবে বিএনপি। এ সময়ে যুব ও ছাত্র কনভেনশন করতে চায় দলটি। ছাত্র কনভেনশনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনের বটতলায় করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ১৫টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্রঐক্য’র আত্মপ্রকাশ হয়েছে। এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পৃক্ত করতে চায় বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা। তারা মনে করছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে না পারলে চলমান আন্দোলনে চূড়ান্ত সফলতা পাওয়া কঠিন। এদিকে যুব কনভেনশন সফলে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাথে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠনের সমন্বয়ে শিগগির ‘যুব ঐক্যজোট’র আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে। আর ১৮ অক্টোবরের মধ্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) বরাবর স্মারকলিপি দিতে পারে বিএনপি। স্মারকলিপিতে পুলিশকে চলমান হামলা-মামলা-গ্রেফতার বন্ধ এবং ইসিকে সম্ভাব্য এক তরফা নির্বাচনের উদ্যোগ না নেয়ার আহ্বান জানানো হতে পারে। অন্যদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা করতে পারেন, সেজন্য আগামী ২০ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত পূজা চলাকালীন বড় কোনো কর্মসূচি রাখছে না বিএনপি।

জানা গেছে, সরকার আলটিমেটাম মেনে পদত্যাগ না করলে, দুর্গাপূজার পরে আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে নামবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। সেক্ষেত্রে ঘেরাও দিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের এ আন্দোলন শুরু হতে পারে। শুরুতেই সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এরপর পর্যায়ক্রমে গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ঘেরাওসহ টানা অবস্থান কর্মসূচিতে যেতে পারে তারা। পাশাপাশি রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের মতো কর্মসূচিও আসতে পারে। একেবারে বাধ্য না হলে হরতালের মতো কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি।

বিএনপি নেতারা জানান, চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে বিএনপি ও তার মিত্রদের কর্মসূচি কেমন হবে, তা সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করবে। সরকারের আচরণ কঠোর হলে কর্মসূচিও কঠোর হবে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার পর তার মনোভাব কেমন হয়, তা পর্যবেক্ষণ করবে বিএনপি ও তাদের শরিক দলের নেতারা। তারা বলছেন, সরকার প্রধানের আচরণ নির্ধারণ করবে বিরোধী পক্ষের কর্মসূচির ধরন কেমন হবে। বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা জানান, চূড়ান্ত ধাপের কর্মসূচি হবে লাগাতার এবং রাজধানী ঢাকার ওপর থাকবে আন্দোলনের মূল ফোকাস।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ