আউট-অলআউট ফর্মুলা

আউট-অলআউট ফর্মুলা

বিশ্বের নজর বাংলাদেশে। পাড়ায় পাড়ায় জিজ্ঞাসা। কখন কোন প্রক্রিয়ায় হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নাকি ভিন্ন কিছু ঘটছে। রাজনৈতিক দলগুলোর চলছে উত্তরপর্ব। এরই মধ্যে প্রভাবশালীদের ইঙ্গিত অতীতের মতো এবার সমঝোতার পথও রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অক্টোবর ঘিরে দেখা দিয়েছে আশঙ্কার হাওয়া। সরকারবিরোধীরা বলছে, চলতি মাসের মধ্যেই তারা বর্তমান সরকারকে অলআউট করবে। সব মিলিয়ে রাজনীতি কূটনীতির আড়ালে হচ্ছেটা কী।

গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে তিনটি বিষয় নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক বোঝাপড়া চলছে বলে জানতে পেরেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে অনাস্থা ও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধীরা চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছে— এবার আর সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়। অংশগ্রহণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনিশ্চয়তায় পড়লে ইতোমধ্যে অনেকগুলো দেশ পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। মার্কিন প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষকরাও শেষ সময়ে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারি দল থেকে আলোচনা-সংলাপের মাধ্যমে সবাইকে নিয়ে যথাসময়ে নির্বাচনের কথা জানিয়েছে তারা। সাংবিধানিক পথ অনুসরণ করে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগকেও তারা স্বাগত জানাবে বলে জানা গেছে। তবে কূটনৈতিক মিশন ও বিরোধীরা চাচ্ছে কিছু সময়ের জন্য রাষ্ট্র সংস্কার অর্থাৎ জাতীয় সরকার গঠন করা। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের কাউকে ওই প্রক্রিয়ায় রাখতেও চাচ্ছে না বড় অংশ। আড়ালে আড়ালে এমন শক্ত পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় সংবিধানের ভেতর থেকে ক্ষমতাসীন দল জরুরি কোনো ভূমিকার কথাও ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে ভাষ্য। তবে অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন ইস্যুতে দেশের উপর আরও কিছু চাপ তৈরি হতে পারে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্বসহ যে সব দেশ রয়েছে তারা এ মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারাও কিছু নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা দেবে। এমন দেশের সংখ্যা প্রায় ২০-এর অধিক। এতে সরকারের সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরাও চাপে পড়বেন। বৈশ্বিক ইস্যু ও প্রেসক্রিপশনে প্রশাসনের ভেতরে থাকা একটি অংশ চলতি মাস কিংবা আগামী মাসে দ্বাদশ নির্বাচন ও দেশের সামগ্রিক ইস্যুতে তাদের মুভমেন্ট কী হতে পারে সেটিও জানাতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। বিরোধীদের ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত যে আন্দোলন খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুতে তা যেকোনো মুহূর্তে ভিন্ন রূপ ধারণা করতে পারে। শেষ দশে হার্ডলাইনে যেতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে।

রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এ মাসের শেষের দিকেই প্রায় চূড়ান্ত হয়ে যাবে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আসলে কোন প্রক্রিয়ায় হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল কি তাদের চাওয়া অনুযায়ী আলোচনা-সংলাপের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে নাকি চাপের মধ্যে জরুরি মুভমেন্টে যাবে। এগুলোতেও জটিলতা বা বাধা তৈরি হলে কিছু সময়ের জন্য সংস্কারের জন্য অন্য কারো হাতেও চলে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতি কেন তৈরি হচ্ছে, জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক উপদেষ্টা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে আমার সংবাদকে বলেন, দেখুন যুক্তরাষ্ট্র তাদের রাজনৈতিক পলিসিতে কখনোই রিঅ্যাক্ট করে না। তারা সবসময় অ্যাক্ট করে। বর্তমান সরকারের ওপর মার্কিনিদের ক্ষোভ এক দিনে তৈরি হয়নি। সাবেক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনাকে হেয় করে খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘কাজের মেয়ে মর্জিনা আপনাকে হাত ধরে নিয়ে ক্ষমতায় বসাবে এটি ভাবা অবান্তর’ এ ছাড়া সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় থেকে তখন থেকেই ক্ষোভ বাড়ে। সর্বশেষ গত চার মাস আগেই প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়’ তখন থেকেই আওয়ামী লীগের উচিত ছিল সতর্ক থাকা। কিন্তু আওয়ামী লীগ তা না করে প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পরিস্থিতি আরও ভিন্ন দিকে নিয়ে যায়।

চাওয়া ব্যতীত ভিন্ন কিছু হলে কী হতে পারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওই উপদেষ্টাসহ অন্তত তিন জনকে একই প্রশ্ন করা হলে তারা জানান, নোভেল বিজয়ী ড. ইউনূস কিংবা তার পছন্দ অনুযায়ী সবাইকে নিয়ে কিছু একটা হতে পারে। সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি থাকবে কি-না জানতে চাইলে তারা বলেন, যারা ড. ইউনূসের পক্ষে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন তারা থাকতে পারেন বলে ধারণা করছি। গতকাল একটি অনুষ্ঠানে বিস্ফোরক মন্তব্য করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, সরকার জরুরি অবস্থা তৈরি করে পালানোর পথ খুঁজতে চাইবে। কিন্তু খালেদা জিয়ার যদি কোনো অঘটন ঘটে যায় তাহলে কাউকে পালানোর সুযোগ দেয়া হবে না। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশে এখন সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই, এখন বিদেশিরাও তা বুঝতে পেরেছে। অনেক দেশ ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে, এই সরকারের অধীনে ভোট হলে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। মার্কিন সরকারও সেই প্রশ্নগুলো খুঁজছে। এই সরকারের ভোট হবে না হতে দেয়াও হবে না।

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। বিএনপি নির্বাচন করবে না, তারা আন্দোলন করবে, সেখানে সহিংসতা হতে পারে, নির্বাচন নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এসব বিষয় নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। আমরা নির্বাচনে যাব কি-না এবার এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি, আমরা এখনো পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক বদিউল আলম মজুমদার আমার সংবাদকে বলেন, ‘২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচন হয়েছে। ২০১৮ সালে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলেও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি। এটি সারা বিশ্বের অভিযোগ রয়েছে। আমাদের একটি সুষ্ঠ,ু নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন দরকার। কারণ প্রতি পাঁচ বছর পরপর আমরা এ সমস্যার সম্মুখীন হই। ৫২ বছরেও আমরা এ সমস্যার সমাধান করতে পারিনি। সুষ্ঠু নির্বাচনের পদ্ধতি বের করতে পারিনি। তাই এ নির্বাচনে অনেক ভাবনার বিষয় তৈরি হয়েছে। দেশি-বিদেশি অনেক হিসাব তৈরি হয়েছে। তবে দেশের জনগণকেই সব সিদ্ধান্ত নিতে হবে ।

জাতীয় রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ