মুসলিম অধ্যুষিত ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধ, হামলার প্রতিবাদ ও আল আকসা মসজিদ রক্ষার দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি করেছে বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে মুসল্লিরা পৃথকভাবে এই কর্মসূচি পালন করেন। মুসল্লিদের স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মুসল্লিরা ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে নিয়ে ইসরাইল বিরোধী ও ফিলিস্তিনের পক্ষে বিভিন্নস্লোগান দেন। এ সময় তাদের ‘বিশ্ব মুসলিম ঐক্য গড়, ফিলিস্তিন মুক্ত করো’, ‘বয়কট ইসরাইল’, ‘ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন, দখলদারদের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আমরা সবাই রাসুল সেনা, ভয় করি না বুলেট বোমা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়।
মুসল্লিদের স্লোগান স্লোগান উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানীর পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকা। খেলাফত মজলিস, জামায়াতে উলামা-ই-ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, ইউনাইটেড মুসলিম উম্মাহ, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ইসলামী যুব জোটের ব্যানারে মুসল্লিরা বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। বিক্ষোভ মিছিলটি বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে শুরু হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে ইউনাইটেড মুসলিম উম্মাহর মানববন্ধনে আহসানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক মুফতি শাঈখ মুহাম্মদ উছমান গনী বলেন, ‘সারা বিশ্বের মুসলিমরা ইসরাইলের এই নির্যাতন অবশ্যই প্রতিহত করবে। প্রতিটি শান্তিকামী মানুষ ইসরাইলের বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে আছে এবং থাকবে। বাংলাদেশের জনগণ ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে ছিল, আছে এবং থাকবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ফিলিস্তিনের মজলুম জনগণের পক্ষে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ ফিলিস্তিনের পক্ষে আছে, থাকবে। এ মুহূর্তে আমাদের সরকারের কাছে দাবি সংসদে ইসরাইলের পক্ষে নিন্দা প্রস্তাব আনুন এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইসরাইলের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলুন।’
এদিকে একই প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস, মুহাম্মদী ফাতেমী ইসলামী ঐক্য সংস্থা ও সম্মিলিত শিয়া মুসলিম পরিষদ নামের তিনটি সংগঠন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মুসল্লিরা যে কোনো মূল্যে ফিলিস্তিনিদের শান্তি প্রতিষ্ঠা, আমেরিকাসহ যেসব দেশ দখলদার ইসরাইলকে সহযোগিতা করছে তাদের সরে আসা এবং ফিলিস্তিনকে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহবান জানান। এর আগে মুসল্লিরা জুমার নামাজে নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের জন্য দোয়া-মোনাজাতে অংশ নেন।
এদিকে, ইসলামি দলগুলোর বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে রাজধানীতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুক্রবার দুপুরে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট ও পল্টন মোড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। মসজিদে প্রবেশের সময় মুসল্লিদের ব্যাগও চেক করতে দেখা গেছে তাদের।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনে ইসরাইলের হামলা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। সংঘাত ও শক্তি প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়ে সংলাপ এবং কূটনীতির মাধ্যমে এই সংকটের স্থায়ী সমাধান আশা করছে বাংলাদেশ।
এদিকে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে ঢাকায় বিভিন্ন সংগঠন সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে। তবে চলমান সংঘাতে বাংলাদেশের আরও জোরালো ও শক্ত অবস্থান চায় ফিলিস্তিন। ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান বাংলাদেশের কাছে আরও জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশা করে বলেন, ‘ফিলিস্তিনের এই সংকটের সময়ে টাকা নয়, আমরা পূর্ণ সমর্থন চাই। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে ফিলিস্তিনকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অনুধাবন করা জরুরি। এটি অর্থনৈতিক সহায়তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে অর্থ নয়, চাই সহমর্মিতা।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘ফিলিস্তিন এখন শুধু ইসরাইল নয়, পশ্চিমা আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে। সেখানকার মানুষজন এক মানবতাহীন জীবন যাপন করছে। বিদ্যুৎ, পানি, খাবার, চিকিৎসা কোনো কিছুই সেখানে আর পর্যাপ্ত নেই। পুরো ফিলিস্তিনজুড়ে মানবতার সংকট চলছে। ফিলিস্তিনের গাজা এখন এক মৃত্যুপুরীতে রূপান্তরিত হয়েছে। মরদেহ রাখারও জায়গা হচ্ছে না মর্গগুলোতে। আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা সব সময় ফিলিস্তিনের নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে এই সংকটের সময় আমরা আরও জোরালো ও শক্ত ভ‚মিকা প্রত্যাশা করি।’
ঢাকায় ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার ১৫টি মিশন রয়েছে। এসব দেশের রাষ্ট্রদূত ও চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্সের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন ঢাকার ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত। ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানিয়ে ইরান, ইরাক, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, কাতারসহ বাংলাদেশে অবস্থিত ওআইসির সদস্যভুক্ত দেশের রাষ্ট্রদূতরা ফিলিস্তিন দূতাবাসে গিয়ে ইতোমধ্যে সংহতি প্রকাশও করেছেন।