ভোটের ‘চূড়ান্ত’ প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন

ভোটের ‘চূড়ান্ত’ প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন

 

অনলাইন রিপোর্ট

 

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিয়ে ‘অনিশ্চিয়তা’ দেখা দিলেও ভোটের ‘চূড়ান্ত’ প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটের প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে ‘বড় ধরনের কোনো বাধা’ দেখছেন না।

তাদের আশা, নির্বাচনের আগেই ‘অংগ্রহণমূলক’ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘সমঝোতা’ হতে পারে। তবে ‘সমঝোতা’ না হলে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা।

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী, আগামী ২ নভেম্বর জাতীয় নির্বাচনের ৯০ দিনের ক্ষণ গণনা শুরু হবে। এজন্য ‘ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে’ নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাব্য লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে ইসি।

আর নভেম্বরের ‘যেকোনো সময়’ তফসিল ঘোষণার পূর্বাভাস দিয়েছে, তফসিলের প্রস্তুতি এখন ‘শেষের পথে’ বলেও ইসি সূত্র জানিয়েছে।

সংসদ নির্বাচনে ব্যালট বাক্স, সিল, স্ট্যাম্প, ব্যাগসহ ‘১৩ ধরনের’ নির্বাচনী উপকরণ কিনতে হয়। এ উপকরণগুলো কেনাকাটাও সেড়ে নিয়েছে কমিশন।

আগামীকাল রোববার থেকে নির্বাচনী সামগ্রী মাঠপর্যায়ে পাঠানো শুরু হচ্ছে। এছাড়া গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের কর্মশালা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ‘বিশেষ প্রস্তাব’ তৈরিসহ এখন সামনের দিনগুলোতে নির্বাচনের ‘চূড়ান্ত ধাপের’ কার্যক্রম চালাবে ইসি।

যদিও দেশের দুই রাজনৈতিক শিবিবের মধ্যে বিপরীতমুখী ‘অনড়’ অবস্থান বিরাজ করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলোর পাশাপাশি বেশকিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি চালাচ্ছে।

তবে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে ‘না যাওয়ার’ ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনে পথে হাঁটছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো।

ইসি মনে করছে, ‘অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর’ নির্বাচনের জন্য প্রত্যাশিত ‘অনুকূল পরিবেশ’ এখনো হয়নি।

তবে ইসি জানিয়েছে, এর মধ্যেই ভোটের ‘সব ধরনের’ প্রস্তুতির কাজ গুছিয়ে এনেছে তারাং।

নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করা ছাড়া তাদের ‘গত্যন্তর’ নেই। তাই নির্বাচনের জন্য ‘প্রয়োজনীয়’ সব কাজ করে যাচ্ছেন।

গত বুধবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা তো এখন পর্যন্ত তেমন কোনো পরিস্থিতি দেখছি না যে আমাদের সামনে কোনো বাধা-বিপত্তি আছে। সামনে বড় ধরনের কোনো বাধা দেখছি না। বাধা যেটা, সেটা আপনারাও জানেন, সবাই আমরা জানি যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সেটা সমঝোতা একটা হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। তখন পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সবকিছু এগিয়ে রাখছি মাথায় রেখে যে আমরা নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারব। এখন তো আমি এ কথা বলতে পারব না যে নির্বাচন আদৌ হবে কি হবে না, সেটি পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর… তখন কী হবে, না হবে, সেটা। তবে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করা ছাড়া আমাদের কোনো গত্যন্তর নেই এবং নির্বাচন না হলে কী হবে সেটাও আপনারা জানেন। কাজেই এটা এখন আমরা বলতে পারব না। যখন নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি হবে তখনই আমরা সেটি সম্পর্কে বলতে পারব। এই মুহূর্তে কিছু বলার নেই।’

যত প্রস্তুতি

ইসি সূত্রে জানা জানায়, এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যালট বক্স লাগবে তিন লাখের বেশি। এর মধ্যে ইসির হাতে আছে ২ লাখ ৬৭ হাজার। নতুন করে কেনা হয়েছে ৮০ হাজার। প্রথম লটে ৪০ হাজার ব্যালট বক্স ইসিতে পৌঁছে গেছে। এগুলো আগামীকাল থেকে অঞ্চলগুলোতে পাঠানো হবে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘প্রথম লটের ৪০ হাজার হাতে পেয়েছি যেগুলো বিএসটিআইয়ের পরীক্ষা শেষে রিপোর্ট পেলে রোববার থেকে পাঁচটি অঞ্চলে পাঠানো হবে। বাকি ৪০ হাজার হাতে পেলে পর্যায়ক্রমে অন্য পাঁচ অঞ্চলে পাঠানো হবে। অন্যান্য মাল সরাসরি জেলায় যাবে। আমাদের প্রস্তুতি অনেকটাই সম্পন্ন হয়েছে।’

নির্বাচন নিয়ে বড় দুই দল দুই মেরুতে থাকায় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ‘বিশেষ সতর্কাবস্থায়’ রয়েছে ইসি। গত ৭ অক্টোবর নির্বাচন ভবনে মাঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ইসি। ওই বৈঠকের পর মাঠ কার্যালয়ের ‘নিরাপত্তা জোরদারে’ মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে চিঠি দেয় ইসি। এদিকে গত ১৪ অক্টোবর বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে ‘শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচনে করণীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয় ইসি।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ‘বিশেষ প্রস্তাব’ তৈরি করে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে কমিশনে উপস্থাপনের জন্য নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখাকে বলা হয়েছে। ওই প্রস্তাবে ‘বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন ও নিষেধাজ্ঞা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনসহ সার্বিক পরিকল্পনা’ উল্লেখ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের শূন্যপদ পূরণ করতে আগামী ২৭ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে ইসি।

এর আগে আগামী ২৬ অক্টোবর ‘জাতির প্রত্যাশা’ নিয়ে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে কর্মশালা আয়োজন করবে কমিশন। এছাড়া আগামী ২৮ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল তৈরির জন্য বিভিন্ন অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সরকারি প্রচার মাধ্যম বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে নির্বাচনী প্রচারণা এবং দলীয় প্রধানের বক্তৃতা সম্প্রচারের নীতিমালা জারি করবে ইসি। একই সঙ্গে বেসরকারি প্রাথমিক ফলাফল প্রচারে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া প্রতিনিধির সঙ্গে সভা করবে কমিশন।

ইতিমধ্যে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র জেলা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বিভাগীয় কমিশনারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ২৮ ও ২৯ অক্টোবর আবারও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

এছাড়া ভোটগ্রহণের এক সপ্তাহ আগে ‘১০ লাখের মতো’ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশের নির্বাচন অফিসগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে ইসি।

নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যথাসময়ে তফসিল দেবো। আশা করছি যে, নভেম্বরের যেকোনো একটি সময়ে তফসিল দিয়ে দেবো।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনসামগ্রী প্রস্তুত রাখা হচ্ছে, যাতে মাঠপর্যায়ে প্রক্রিয়া শুরু করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করছে ইসি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনায় ৯২টি দফা রয়েছে। এ কার্যক্রম ভোটের পরেও চলমান থাকবে। আমাদের যে কর্মপরিকল্পনা রয়েছে পিছিয়ে নেই; কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছি।’

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ