বিএনপি ঘোষিত আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা’কে কেন্দ্র করে রাজপথে কঠোর অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ। আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিনে বড় জমায়েত নিয়ে মাঠে থাকবে ক্ষমতাসীন দলও। আন্দোলনের নামে যে কোনো বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের কড়া জবাব দিতে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন। বড় দুই দলের এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে ২৮ অক্টোবর ঘিরে জনমনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গত বছরের শেষ ভাগ থেকেই রাজধানীতে একই দিনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে আসছে। এ নিয়ে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে অনেক। নির্বাচন এগিয়ে আশার সঙ্গে সঙ্গে দুপক্ষের অবস্থান আরও কঠোর হচ্ছে। ঢাকায় মহাসমাবেশের মাধ্যমে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। আর সেই আন্দোলন ঠেকানোর কথা বলছে আওয়ামী লীগ। ফলে রাজনীতির আলোচনায় আরও একবার সামনে চলে এসেছে ২৮ অক্টোবর তারিখটি। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াত সরকারের মেয়াদের শেষ দিনে ‘লগি-বৈঠা’ নিয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশ করে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট। ওই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল।
জানা গেছে, তপশিল ঘোষণার দিনক্ষণ এগিয়ে আসায় এই সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় বড় দুই দলই রাজধানীতে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকার মহাসমাবেশে সমবেত করতে চায় বিএনপি। এই কর্মসূচি শেষে বিরোধীরা যাতে ঢাকায় অবস্থান নিতে না পারে, সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখবে আওয়ামী লীগ। সেইসঙ্গে কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি সৃষ্টি না করতে পারে, সেই প্রস্তুতিও থাকবে ক্ষমতাসীনদের।
গতকাল আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ থেকে বিএনপির উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপির একদফা দাবি উড়িয়ে দিয়ে শেখ হাসিনার অধীনেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। বিএনপির অবরোধের মতো কর্মসূচির বিপরীতে পাল্টা অবরোধেরও ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এমনকি তাদের রাজপথে দাঁড়াতে না দেওয়ার হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, ‘সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সন্ত্রাসীদের ঢাকায় জড়ো করছে বিএনপি। ২৮ তারিখে তাদের যদি কোনো অসাধু অভিপ্রায় থাকে, তবে ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকব। দলের নেতাকর্মীরা জনগণের জানমালের নিরাপত্তার পাহারায় থাকবে।’
দলীয় সূত্র জানায়, ২৮ অক্টোবর সামনে রেখে আওয়ামী লীগ রাজধানীতে বর্ধিত সভা করবে। বর্ধিত সভায় দলের সহযোগী সংগঠন, ঢাকার আশপাশের সব জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সংসদ সদস্যদের সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হবে। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে পাহারায় থাকতে বলা হতে পারে। শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে ব্যাপক মানুষের সমাগম ঘটানোর টার্গেট নিয়েছে। এর মাধ্যমে রাজধানীতে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দিতে চায় আওয়ামী লীগ।
এর আগে গত ১৩ অক্টোবর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে হঠাৎ বৈঠক করেন। সেই সভায় দলের প্রতিটি অঙ্গসংগঠনকে এলাকায় এলাকায় কর্মসূচি বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিএনপির এই কর্মসূচি ঘিরে কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সেজন্য সমাবেশ কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি রাজধানীর অলিগলি ও পাড়া-মহল্লায় সতর্ক পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতেই এই উদ্যোগ।
এদিন রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিট ও থানার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সতর্ক পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মূলত বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সরব রাখতে এবং রাজনীতির মাঠে বিএনপির বিশৃঙ্খলা ঠেকাতেই এমন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলী টানেলের উদ্বোধনের কর্মসূচি এগিয়ে অথবা পিছিয়ে নেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া শুক্রবারের ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভা পিছিয়ে ২৫ অক্টোবর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী বুধবারের ঢাকা উত্তর মহানগরের বাড্ডার শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। ২৮ তারিখের কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।
জানা গেছে, এর আগেও গত বছর ১০ ডিসেম্বরে বিএনপির একই ধরনের পরিকল্পনা ছিল। ওই সময় বিএনপির চিন্তা ছিল, ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে অবস্থান করবে। সরকারের দৃঢ়তায় বিএনপির কর্মসূচি ভেস্তে যায়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আমরা নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণার অংশ হিসেবেই এদিনও কঠোর কর্মসূচি দেব। কোনো ধরনের সন্ত্রাসী ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলে তার কড়া জবাব দেওয়া হবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না, জনগণের সম্পদ বিনষ্ট করতে দেওয়া হবে না।’