একাদশ সংসদের সর্বশেষ অধিবেশন (২৫তম) বসছে আজ রবিবার। এই অধিবেশনে সবচেয়ে বেশি বিল পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সংসদে এমপিদের মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ৩১ অক্টোবর অধিবেশন শেষ হতে পারে।
বর্তমান সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। আগামী ২৯ জানুয়ারি এই সংসদের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হবে। সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী, আগামী ১ নভেম্বর থেকে নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে।
স্বাভাবিক সময়ে একটি অধিবেশন শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে পরবর্তী অধিবেশন বসার বাধ্যবাধকতা থাকলেও নির্বাচনীকালের জন্য সেটা প্রযোজ্য নয়। ফলে চলতি অধিবেশন এই সংসদের শেষ অধিবেশন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় নিয়মিত বিরতিতেই অনেকটা নিয়মরক্ষার জন্য সংসদ অধিবেশন বসেছে। দুই বছর করোনা মহামারির মধ্যে সীমিত পরিসরে সংসদের কার্যক্রম চলেছে।
করোনার কারণে মাত্র দেড় ঘণ্টায় একটি অধিবেশন শেষ করা হয়েছে, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন। গত ১৪ সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া ২৪তম অধিবেশন পর্যন্ত মোট ২৬২ কার্যদিবস অধিবেশন বসেছে। এর আগে দশম সংসদ ৪১০ কার্যদিবস ও নবম সংসদ ৪১৮ কার্যদিবস চলে।
সংসদ সচিবালয়ের তথ্যানুযায়ী, চলতি সংসদে রেকর্ডসংখ্যক অধিবেশন বসলেও তুলনামূলক কমসংখ্যক বিল পাস হয়েছে। গত ২৪তম অধিবেশন পর্যন্ত ১৪০টি বিল পাস হয়েছে।
এর আগে নবম সংসদে ২৭১টি ও দশম সংসদে ১৯৩টি বিল পাস হয়েছিল। তবে একাদশ সংসদের চলতি অধিবেশনে রেকর্ডসংখ্যক বিল পাসের সম্ভাবনা রয়েছে। গত অধিবেশনে ১৮টি বিল পাস হয়েছিল। এবার ২৫টির মতো বিল পাস হতে পারে।
এদিকে চলতি সংসদে রেকর্ডসংখ্যক ৩১ জন সংসদ সদস্যের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ বরেণ্য সংসদ সদস্যরা মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ছাড়া কুয়েতের আদালতে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলের সাজা হওয়ায় বিদেশে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে জড়িত থাকায় সংসদ সদস্য পদ বাতিলের ঘটনাও প্রথম ঘটেছে।
আজ বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদের কার্য-উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অধিবেশনের মেয়াদ ও কার্যসূচি চূড়ান্ত হবে। সব মিলিয়ে চলতি সংসদের কার্যদিবসের সংখ্যা ২৭০ হতে পারে। এর আগে চলতি সংসদের প্রথম বছর ২০১৯ সালে ৬১ কার্যদিবস, ২০২০ সালে ৫৩ কার্যদিবস, ২০২১ সালে ৪২ কার্যদিবস, ২০২২ সালে ৪৪ কার্যদিবস এবং চলতি বছরে ৬১ কার্যদিবস অধিবেশন বসেছে। এই সংসদের ২৫টি অধিবেশনের মধ্যে দুটি বিশেষ অধিবেশন ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর বিশেষ অধিবেশন বসে। পরের বিশেষ অধিবেশনটি ছিল চলতি বছরের এপ্রিল মাসে। জাতীয় সংসদের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে এই অধিবেশন বসে।
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, চলতি সংসদে অধিবেশনের কার্যদিবস কম হলেও প্রতিটি অধিবেশন সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধি মেনে বসেছে এবং পরিচালিত হয়েছে। সংসদ ছিল পুরোপুরি কার্যকর।
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা কালের কণ্ঠকে বলেন, সংসদকে কার্যকর করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। অতীতের মতো সংসদ বর্জনের পরিবর্তে বিরোধীরা সরকারের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিতে সব সময় সোচ্চার ছিল। সংখ্যায় কম হলেও বিরোধীদলীয় সদস্যদের সংসদীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে।