দেশের রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঘোষিত ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি। আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা এবং বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো ২৮ অক্টোবর শক্তি ও জনসমর্থন প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একে অন্যকে হুঁশিয়ারি-পাল্টা হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। সরকার ও বিরোধী পক্ষ মাঠ নিজেদের দখলে রাখার ঘোষণাও দিয়েছে। সরকার ও বিরোধী পক্ষের এই অবস্থানে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে অতি দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ বেশি চিন্তিত। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ফুটপাতে থাকা হকাররা মনোক্ষুণ্ন। কারণ, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না থাকলে কর্মহীন হয়ে পড়েন দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করা হাজার হাজার শ্রমিক। অন্যদিকে স্বাভাবিক পরিবেশ না থাকলে রাস্তার হকার থেকে শুরু করে সব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীই ক্ষতিগ্রস্ত হন। ফলে রাজপথে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ও অবস্থানের কারণে একেবারেই যারা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন তারা ক্ষুব্ধ হন, ক্ষতিগ্রস্ত হন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
গত ১৮ অক্টোবর পৃথক দুটি সমাবেশ করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। ওই সমাবেশগুলো থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে হুঁশিয়ারি-পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বিএনপি ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ ডাক দেয়ার পর আওয়ামী লীগও পাল্টা জমায়েতের ঘোষণা দিয়ে মাঠে অবস্থান করছে। এই পাল্টাপাল্টি অবস্থান কারো জন্যই ভালো কিছু বয়ে আনবে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, মুখোমুখি অবস্থানের কারণে দেশ সঙ্ঘাতের দিকে যাবে, এতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে নভেম্বর মাসের শুরুর দিকেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে চায় নির্বাচন কমিশন-ইসি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো ইসির এই ইচ্ছার সঙ্গে একমত। জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ কষ্টে আছে, সরকার নিত্যপণ্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে’-এমন বক্তব্য দিলেও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে তারা স্পষ্ট করে কোনো কথা বলছে না।
অন্য দিকে টানা ১৭ বছর রাজপথে বিরোধী দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও তাদের রাজনৈতিক মিত্র দলগুলো এই সরকার ও ইসির অধীনে ভোটে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রয়েছে। তারা এই আন্দোলনে মহাযাত্রা শুরু করতে চায় ২৮ অক্টোবর থেকে। এ জন্য ওই দিন ঢাকায় একটি মহাসমাবেশও ডেকেছে। সমাবেশ করার অনুমতি নিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে ইতোমধ্যে পত্রও দিয়েছে বিএনপি। গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। এদিকে একই দিন ঢাকায় গণজমায়েত করতে চায় আওয়ামী লীগ। দলটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ অক্টোবর রোববার সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অর্থাৎ আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকা দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও তার মিত্ররা নিজ নিজ শক্তি জানান দিতে চায়। বাধা এলে শক্তি প্রয়োগেরও চিন্তাও রয়েছে দলগুলোর মধ্যে, সাম্প্রতিক সময়ে দলগুলোর নেতাদের দেয়া বক্তৃতায় এমনই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গত ১৮ অক্টোবর জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ যে শান্তি সমাবেশ করেছিল ওই সমাবেশ থেকে দলটির নীতিনির্ধারকরা রাজপথ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। দলটির নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ নেতাকর্মীদের হাতে লাঠি নিয়ে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। একই দিন বিএনপি দলটির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশ থেকে দাবি আদায়ে সর্বশক্তি প্রয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ বলছেন, জীবন দিয়ে হলেও তারা দাবি আদায়ের মাঠে থাকবেন।
এদিকে নির্বাচন নিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও থেমে নেই বিদেশি তৎপরতা। ২২ অক্টোবর সচিবালয়ে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। তিনি ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকারের অবস্থান জানতে চেয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।
২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে দেশের পরিস্থিতিতে অনিশ্চিয়তার দিকে যেতে পারে এমন ইঙ্গিত দিয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘সময় শেষ হয়ে যায়নি, এখনো সময় আছে, সরকার চাইলে এখনো আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধান করা সম্ভব।’ আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধান না হলে তা দেশের জন্য কোনোভাবেই শুভ হবে না বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।
আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকার রাজপথ আওয়ামী লীগের দখলে থাকবে বলে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন ‘বিএনপির মহাসমাবেশ, ছোট সমাবেশ, মাঝারি সমাবেশ ও তাদের হাঁটা, দৌড় বা বসা কর্মসূচি, ভবিষ্যতে হয়তো হামাগুঁড়ি দেয়া কর্মসূচি আসবে— এগুলোতে আমরা কখনো চাপ অনুভব করিনি। আমরা রাজপথের দল, আমরা রাজপথে আছি, রাজপথে থাকব। ২৮ তারিখেও রাজপথ আওয়ামী লীগের দখলে থাকবে ইনশাআল্লাহ।’
এদিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের এক যৌথসভা ২২ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২৮ তারিখ মহাসমাবেশে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা আসবেন, কর্মসূচি শেষ করে চলে যাবেন। বসে থাকার কোনো পরিকল্পনা নেই। এমন কোনো কর্মসূচি আমরা দেইনি।