বিএনপি, জামায়াত ও বিরোধী দলগুলোর তিনদিনের দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আজ প্রথম দিন মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকালে উত্তরায় সড়ক বন্ধের চেষ্টা করা হয়। এ সময় টায়ারে আগুন দেয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৭টার দিকে ঢাকার অন্যতম প্রবেশমুখ উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখেন। তারা টায়ারেও আগুন দেন। পরে পুলিশ এসে আগুন নিভিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।
অবরোধ ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে সপ্তাহের অন্যতম কর্মব্যস্ত দিন হলেও সকালে তুলনামূলক কম যানবাহন দেখা গেছে সড়কে।
এর আগে গত শনিবারের মহাসমাবেশ পণ্ড এবং সেখানে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রোববার (২৯ অক্টোবর) সারা দেশে বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যার হরতাল পালিত হয়েছে। ওইদিন সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঘোষণা করেন, ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা অবরোধ পালন করবে বিএনপি ও এর শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ।
এদিকে ঢাকায় ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচিকে ঘিরে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনায় গত দুদিনে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মোট ৩৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত (নাম উল্লিখিত) আসামির সংখ্যা এক হাজার ৫৪৪। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো কয়েক হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে গতকাল এ তথ্য জানানো হয়।
সহিংসতার ঘটনায় রোববার ২৮টি ও গতকাল নতুন করে আরো নয়টি মামলা হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশেরই বাদী পুলিশ। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বেশির ভাগকেই এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাংচুরের ঘটনায় রমনা থানায় করা মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গুলশানের বাসা থেকে রোববার সকালে আটকের পর আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশ হত্যাসহ অন্তত চারটি মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে।
মামলাগুলোর আসামিদের তালিকায় বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রুহুল কবির রিজভী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বরকতউল্লা বুলু, জয়নুল আবদিন ফারুক, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, শামসুজ্জামান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শাহজাহান ওমর, মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখের নাম রয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ সদস্য হত্যা, হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল বিস্ফোরণ, সরকারি কাজে বাধা দেয়া, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার মতো অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ২১ অক্টোবর থেকে নয়দিনে রাজধানীতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এক হাজার ৭২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আটক করা হয়েছে বিএনপির মহাসমাবেশের দিন ২৮ অক্টোবর, ৬৯৬ জনকে। তার আগের দুদিনে গ্রেফতার করা আরো ৫৪২ জনকে। ২৯ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয় আরো ২৫৬ জনকে।
বিএনপির অভিযোগ, গত ২৮ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশে তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪৪২টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতারের সংখ্যা এরই মধ্যে পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। দলটি বলছে, এসব গ্রেফতার ও নির্যাতনের অবসান এবং সরকার পতনের দাবি আদায়ের জন্যই নতুন করে অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে তারা।