করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট বৈশি^ক সংকটে টালমাটাল অবস্থায় পড়ে দেশের অর্থনীতি। ডলার সংকট, আমদানিতে কড়াকড়ি, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমে আসা, দফায় দফায় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি এবং লাগামীহন মূল্যস্ফীতির কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দেশের অর্থনীতি সংকটের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। দিনে দিনে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা যখন দুরূহ হয়ে উঠছে, তখন হঠাৎ করেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংঘাত-সহিংসতার দিকে যাত্রা করায় তা অর্থনীতির জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। তারা মনে করেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নেতিবাচক ধারা আরও প্রলম্বিত হবে এবং সাধারণ মানুষ বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন কর্মসূচি না নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গত শনিবার প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মহাসমাবেশে
সহিংসতাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘসময় পর আবার হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে ফিরেছে দেশের রাজনীতি। এর পরের দিন রবিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের পর আজ থেকে সারাদেশে টানা তিন দিনের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ফলে এই সময়ে সারাদেশে রেল, নৌ ও সড়কপথে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। আর উৎপাদন ব্যাহত হলে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হবে। আর পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘিœত হলে দামও বাড়বে। অন্যদিকে অবরোধের সময় রাজপথ উত্তপ্ত হলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ খেটে খাওয়া মানুষের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে। এটা নিয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, কোনো দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সঙ্গে দাঙ্গা, মারামারি ও সহিংসতা থাকলে সে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। আমরা এখন সে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি। চলমান এই অস্থিরতা দেশের জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কারণ এর ফলে সব খাতেই স্বাভাবিক কাজকর্ম বিঘিœত হবে। পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘিœত হবে। আমদানি পণ্য বন্দর থেকে খালাস করে উৎপাদনস্থলে আনতে সমস্যা হবে। এতে উৎপাদন ব্যাহত হবে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রপ্তানিতেও। তিনি বলেন, এমনিতেই বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ স্থবির। গত ৮-১০ বছর ধরে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২২-২৩ শতাংশের ঘরে আটকে আছে। চলমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ আরও কমে যাবে। একই কারণে বিদেশি বিনিয়োগও কমবে। ফলে কর্মসংস্থানও কমবে। এছাড়া কিছু মানুষের নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকবে।বিস্তারিত