রাজনীতিতে সংঘাতময় পরিস্থিতি অর্থনৈতিক সংকটের শঙ্কা অর্থনৈতিক সংকট এড়াতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি -এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম * রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ কমবে -ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ * স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রপ্তানি বেড়েছে অস্থিতিশীল পরিবেশে তা হবে না -মোহাম্মদ হাতেম * রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে আমাদের আশঙ্কা আসেই -মোহাম্মদ নাসির

রাজনীতিতে সংঘাতময় পরিস্থিতি অর্থনৈতিক সংকটের শঙ্কা অর্থনৈতিক সংকট এড়াতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি -এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম * রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ কমবে -ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ * স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রপ্তানি বেড়েছে অস্থিতিশীল পরিবেশে তা হবে না -মোহাম্মদ হাতেম * রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে আমাদের আশঙ্কা আসেই -মোহাম্মদ নাসির

করোনা ও বৈশ্বিক সংকট (রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ) দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিকে থমকে দিয়েছে। মহামারি ও যুদ্ধের মতো দুটি বড় ধরনের ধকল পুরোপুরি এখনো কাটেনি। এখনো সংকট বিরাজ করছে মার্কিন ডলারের। শিল্পের এলসি খোলার ওপর বিধিনিষেধ এখনো প্রত্যাহার হয়নি। কবে তা তুলে নেওয়া হবে সেটিও অনিশ্চিত। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা মুডি’স রেটিংয়ে দেশের ঋণমান কমছে বলে খবর প্রকাশ করেছে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও নড়েচড়ে বসছে।

 

এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য যখন ঘূর্ণিপাক করছে, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশের রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতি। দুদলের মহাসমাবেশ, রাজনৈতিক সহিংসতা, পালটাপালটি কর্মসূচি, ধরপাকড়, গ্রেফতার, অগ্নিসংযোগ ও জনদুর্ভোগ নতুন করে অর্থনীতিতে শঙ্কা তৈরি করেছে। অর্থনীতিবিদ, শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী মহল এই শঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন। তারা মনে করেন, অর্থনৈতিক সংকট এড়াতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। না হলে দেশে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, আমদানি ও রপ্তানিসহ নানা খাত ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

সম্প্রতি তিন দলের কর্মসূচি ঘিরে রাজপথে অগ্নিসংযোগ, পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা, ভাঙচুর, হরতাল হয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে টানা তিন দিন সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

এর আগে দুটি বড় ধকল মোকাবিলা করেছে দেশের অর্থনীতি। এর মধ্যে একটি করোনা মহামারি। যার প্রভাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমেছে। দ্বিতীয় সংকট রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর কারণে মার্কিন ডলারের সংকট ও মূল্যস্ফীতির মতো ভয়াবহ জাঁতাকলে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এর সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে রাজনৈতিক সংকট।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম  বলেন, অর্থনৈতিক সংকট এড়াতে যে কোনো সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি। এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেভাবে অস্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে এতে নানাভাবে অর্থনীতিতে আঘাত আসবে। আমরা কিন্তু আমদানি ও রপ্তানি অর্থাৎ বৈশ্বিক বাণিজ্যের ওপর অনেকাংশ নির্ভরশীল। আর আমদানি ও রপ্তানির পণ্য উৎপাদন স্থল থেকে বন্দরে বা বন্দর থেকে উৎপাদনস্থলে পরিবহণের মাধ্যমে আনা-নেওয়া হয়। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে এক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর ফলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেটি হলে প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানের ওপর। নতুন কর্মসংস্থান হবে না, এতে কর্মসংস্থান আরও কমবে। যার প্রভাবে বেড়ে যেতে পারে বেকারের সংখ্যা। সব মিলে সার্বিক পরিস্থিতি অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। যা অর্থনীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সংকট সমাধানের পথ বের করতে গিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমি খুব আশা পোষণ করি না। তবে এর সমাধানের রাস্তা একটাই-বড় দলগুলোর মধ্যে আলোচনা। সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে কী হবে না, কীভাবে নির্বাচন পরিচালিত হবে, ভোটকেন্দ্রে ইভিএম থাকবে কী থাকবে না আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে সামনের দিনগুলো কেমন যাবে সে নিয়ে তৈরি হবে অনিশ্চয়তা। আর অনিশ্চয়তা থাকলে ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বেন। ব্যবসায়ীরা মনে করবেন আমার টাকা ফেরত আসবে কিনা, পণ্য বাজারজাত হবে কিনা, শিল্প চালাতে পারব কিনা এসব বিষয় নিয়ে তারা ভাবতে শুরু করবেন। আরও ভাববেন বিনিয়োগ করলে কোনো ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এই অনিশ্চয়তা অভ্যন্তীরণ ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের জায়গা তৈরি করবে। আর দ্বিতীয় হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে। বিদেশিরা রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ দেখলে বিনিয়োগ করবে না। এমনিতে আমাদের বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কম আসছে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে এখানে আরও চাপ পড়বে। তিনি বলেন, এমনিতে আন্তর্জাতিক সংস্থা মুডি’র হিসাবে বাংলাদেশের ঋণমান কমেছে। বিভিন্ন কারণে এখনো অনিশ্চয়তা আছে দেশে। মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে অনেক কিছু। যে কোনো সময় একটি বা দুটি খাতে আঘাত এলেই পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতি ঠিক করতে হবে। তবে এখন দেশের অর্থনীতি বেশি চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে।

বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রপ্তানি বেড়েছে। কিন্তু অস্থিতিশীল পরিবেশে সেটি হবে না। একটি কথা মাথায় রাখতে হবে, দেশের রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ আছে। বিশ্ববাজারে চীন ও ভিয়েতনামের রপ্তানি আগামীতে কমবে। সেখানে একটি ঘাটতি তৈরি হবে। এই ঘাটতি বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করবে। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা বিরাজ করলে বিশ্ববাজারে ওই সুযোগ আমরা ধরতে পারব না। হাতছাড়া হয়ে যাবে। কারণ তখন ক্রেতারা আমাদের অর্ডার কমিয়ে দেবে, নানাভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। সেজন্য উভয় দলের প্রতি আমাদের আবেদন থাকবে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত করবে এমন কর্মসূচি যেন না দেয়। বিগত সময়ে এ ধরনের অস্থিরতার কারণে বিদেশি বায়াররা নিরাপত্তাহীনতা মনে করে এখানে আসেনি। না এলে মার্কেটে অর্ডার প্লেস বিঘ্নিত হবে। রপ্তানি কমবে। আমরা মনে করি সরকার এ বিষয়ে সচেতন। বিগত সময়েও অর্থনীতি যাতে ক্ষতি না হয় সব ধরনের পদক্ষেপই সরকার নিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতেও দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সরকার সে ব্যবস্থা নেবে বলে আমরা আশা করছি।

বিজিএমইএ’র সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাসির বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে আমাদের আশঙ্কা আসেই। কারণ আমরা দেখছি ২০১৩ ও ২০১৪ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশি ক্রেতারা আমাদের অনেক অর্ডার কর্তন করে দিয়েছে। এমনিতেই তৈরি পোশাক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাজারে অর্ডার কম আসছে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বা অস্থিরতা শুরু হলে আরও পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে। তিনি মনে করেন, যত দ্রুত সম্ভব যেন উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় নির্বাচন হয়। উভয় দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই যেন এ নির্বাচন হয়। দেশবাসী ও বিদেশি ক্রেতারাও কিন্তু এটি আশা করছেন। আমরা ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে পা রাখতে যাচ্ছি, সেটি মনে রাখতে হবে। পাশাপাশি অর্থনীতি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ সংবাদ