দেশজুড়ে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই তীব্র হয়ে উঠেছে শ্রমিক অসন্তোষ। সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের গুলিতে দুই শ্রমিক নিহতের পর থেকেই বাড়তে থাকে অসন্তোষ। অন্যদিকে ন্যূনতম মজুরির দাবি আদায় না হওয়াতেও দিনে দিনে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন শ্রমিকরা। যা ধীরে ধীরে গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে গত মঙ্গলবার পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে সরকার। এতেও শ্রমিকদের দাবি পূরণ হয়নি। তারা ১২ হাজার ৫০০ টাকা ন্যূনতম মজুরির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন। যে কারণে দাবি আদায়ের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গতকালও গাজীপুরে বিক্ষোভে নামেন বেশকটি গার্মেন্টের শ্রমিকরা। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা। এ সময় পুলিশের গুলিতে এক নারী শ্রমিক নিহত হন। দুপুরের এ ঘটনার পর শেষ বিকালে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের এক সদস্যের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতির একপর্যায়ে গতকাল গার্মেন্ট মালিকদের পক্ষ থেকেও বলা হয়, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের পরও শ্রমিকদের আন্দোলন দুঃখজনক। দাবি আদায়ে শ্রমিকদের আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা, মালিকপক্ষের অনমনীয়তা, সবমিলিয়ে চরম পর্যায়ে যাচ্ছে পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে বিদ্যমান অসন্তোষ। সমাবেশেরও ডাক দিচ্ছেন শ্রমিকরা।যা মোকাবিলা সরকারের জন্য অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং— বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, মঙ্গলবার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে গতকাল বুধবার সকালে বিক্ষোভে নামেন গাজীপুরের কোনাবাড়ি ও জরুন এলাকার স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্ট লিমিটেড, রিপন নিটওয়্যার লিমিটেড, ইসলাম গার্মেন্ট ও বেস্টঅল সোয়েটারসহ আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা। তারা কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার সামনেই বিক্ষোভ শুরু করলে কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পরে সকাল ৮টার দিকে কাশিমপুরের জরুন মোড়ের সামনে একত্রিত হয়ে মিছিল করতে থাকেন শ্রমিকরা। একপর্যায়ে বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে কাঠ ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন। এছাড়া, বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুরের চেষ্টা করেন তারা। একপর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করার চেষ্টা করেন শ্রমিকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। পরে ছত্রভঙ্গ হয়ে রওশন মার্কেট হয়ে হাতিমারার দিকে এগিয়ে যান উত্তেজিত শ্রমিকরা। এ সময় পুলিশের সরাসরি গুলিতে আঞ্জুয়ারা ইসলাম নামের এক গার্মেন্ট কর্মী নিহত হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সহকর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের বিস্ফোরণ তৈরি হয়।বিস্তারিত