বিশেষ প্রতিনিধি ঢাকা
বিএনপির হরতাল–অবরোধে দেশের যেখানেই যানবাহন পোড়ানো কিংবা ভাঙচুর করা হোক, সেখানে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের গিয়ে তদন্ত করতে হবে। এ ঘটনায় কে জড়িত, তাঁর মাতা–পিতার নাম, বাড়ির ঠিকানাসহ সব বৃত্তান্ত নিয়ে তালিকা করতে হবে। এরপর তালিকা ধরে প্রত্যেকের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে দলটির সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া নির্বাচন সময়মতো হবে জানিয়ে এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র আছে, তবে এগুলো ঠেলে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রতিটি বিভাগের জন্য আগে থেকেই একটি করে সাংগঠনিক কমিটি করা আছে। সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকেরা ওই কমিটিগুলোর সমন্বয়ক। সদস্য হিসেবে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতারা রয়েছেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, এখন ঢাকা কিংবা বিভাগীয় শহরে বড় সমাবেশ বা শোডাউন না করার পরামর্শ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। পরিবর্তে সাংগঠনিক কমিটিগুলোকে নিজ নিজ বিভাগের প্রতিটি জেলা সফর করে বর্ধিত সভা ও কর্মিসভা করতে নির্দেশ দেন তিনি।
তৃণমূলকে আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং বিএনপিসহ বিরোধীদের হরতাল–অবরোধ মোকাবিলা একসঙ্গে করার বার্তা দেওয়ার কথা বলেছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি তৃণমূল নেতাদের উজ্জীবিত করার পরামর্শ দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাদের কোনো বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে অহেতুক বক্তব্য না দেওয়ারও নির্দেশ দেন। কে কী বলল, তাতে দলীয় নেতাদের কান দেওয়ার দরকার নেই। কোনো বক্তব্য থাকলে সেটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলবে।
একজন কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর বিষয়ে বক্তব্য দেন। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে যা ভোট পড়বে, তা–ই যথেষ্ট। ভালো নির্বাচন প্রমাণ করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ভোট পড়তে হবে—এটা পৃথিবীর কোথাও নেই। ভোট বাড়ানোর জন্য সিল মারা, জাল ভোট দেওয়া যাবে না।
গণভবনে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
গণভবনে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাছবি: পিআইডি
বৈঠকে একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, প্রতিটি আসনে একজন করে টাকা দিয়ে কিনে বিরোধীরা জাল ভোট দেওয়াতে পারে। এরপর তা ভিডিও করে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ভোট কলঙ্কিত করতে পারে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা যাতে কেউ না করতে পারে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
একজন নেতা দলের মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, নিজ দলের কর্মীদের অত্যাচার–নির্যাতনের অভিযোগ করেন। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ থাকলে তাঁর কাছে যাতে দেওয়া হয়। তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
বিএনপি নির্বাচনে আসবে না—এটি নিশ্চিত ধরে না নিতে পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর শুরু হওয়া বৈঠক প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে। শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে শোক প্রস্তাব ও দিবসভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকেরা রিপোর্ট উপস্থাপন করেন।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা আর সদস্যসচিব দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ের মতো এবারও আওয়ামী লীগের নির্বাচন প্রস্তুতিতে ১৪টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।
গতকাল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শেষে গণভবনের গেটে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো–চেয়ারম্যান পদ পূরণ করা হয়নি। তিনি জানান, এবার দলের মনোনয়ন ফরমের দাম বাড়ানো হয়েছে। গত নির্বাচনে ৩০ হাজার টাকা ছিল। এবার তা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা চাইলে অনলাইনেও ফরম তুলতে ও জমা দিতে পারবেন। মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১০টি দল থাকবে।