নিজস্ব প্রতিবেদক
দীর্ঘদিন উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল থাকার পর বাজারে চালের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে চিকন ও মোটা চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। একই সময়ে মোটা চালের দাম খুচরা বাজারে কেজিতে বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ টাকা। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের পছন্দের মোটা চাল ব্রি-২৮ মানভেদে দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা।
বাজারে মিনিকেট বলে পরিচিত চিকন চাল মানভেদে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এবং নাজিরশাইল মানভেদে ৬৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিন রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাবুবাজার, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও বাড়তি দামে চাল বিক্রি করা হচ্ছে।
নতুন করে চালের দাম বাড়ায় উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে সাধারণ মানুষ আরো চাপের মধ্যে পড়েছে।
চাল ব্যবসায়ী ও চালকল মালিকরা (মিল মালিক) বলছেন, অবরোধ ও হরতালের কারণে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি এবং মৌসুমের শেষ দিকে সরবরাহ কমে যাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। ডিসেম্বরের শুরুতে বাজারে নতুন চাল এলে তখন দাম কমে আসবে। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ বিভিন্ন এলাকায় আগাম ধান কাটা শুরু হয়েছে। এই ধান বাজারে এলে চালের দাম কমতে শুরু করবে।
তবে কৃষকরা বলছেন, আগাম ধানের আশানুরূপ দাম পাওয়া যাচ্ছে না।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মিল মালিকদের কারসাজিতে নতুন করে চালের বাজারে এই অস্থিরতা। নানা অজুহাতে তাঁরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।
কারওয়ান বাজারে দুই সপ্তাহে পাইকারিতে চিকন ও মোটা চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। গতকাল মোটা চাল ব্রি-২৮ মানভেদে ২৬০০ থেকে ২৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
চিকন চালের (মিনিকেট) দাম এখন বস্তাপ্রতি ৩১০০ থেকে ৩৩০০ টাকা। নাজিরশাইল চাল মানভেদে বস্তাপ্রতি (২৫ কেজি) ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারে চালের পাইকারি ব্যবসায়ী ঢাকা রাইস এজেন্সির মালিক মো. সায়েম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম দুই থেকে চার টাকা বেড়েছে। পাইকারিতে দাম বাড়ায় খুচরায়ও এর প্রভাব পড়েছে। বাজারে নতুন চাল না আসা পর্যন্ত এই দাম কমার সম্ভাবনা নেই।’
রাজধানীর চালের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাবুবাজার। জানতে চাইলে বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাধারণত প্রতিবছর মৌসুমের শেষ দিকে চালের দামে কিছুটা পার্থক্য দেখা দেয়। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অবরোধ ও হরতালের প্রভাব। অবরোধে পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এতে বাবুবাজারে পাইকারিতে বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দাম বেড়েছে।’
নিজাম উদ্দিন আরো বলেন, ‘এ বছর দেশের বাজারে চালের কোনো সংকট নেই। ডিসেম্বরের শুরুতে নতুন চাল বাজারে চলে আসবে, তখন দামও কমে আসবে।’
বাড্ডা বাজারে গতকাল চাল কিনতে আসা বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানের কর্মী মো. রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চালের দাম বেশি হলেও একটা জায়গায় স্থির ছিল। এখন দাম বাড়ায় আমাদের জন্য তা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত দুই বছরে আমার বেতন বেড়েছে মাত্র এক হাজার টাকা, কিন্তু খরচ বেড়েছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এ অবস্থায় সংসার সামাল দিতে গিয়ে খুব বেগ পেতে হচ্ছে।
ঢাকার বাইরেও চালের দাম বাড়তি
বগুড়া অফিস জানায়, উত্তরাঞ্চলের অন্যতম চালের মোকাম বগুড়ার দুপচাঁচিয়া ও শেরপুর উপজেলায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম প্রতি কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। খুচরায় সেখানে কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। শেরপুর মোকামের চাল ব্যবসায়ী শাহ আলম ও জাহিদুল ইসলাম সুমন জানান, প্রতি বস্তা (১০০ কেজি) চাল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।
এক বছরে মোটা চালের দাম ৮-১২% বেড়েছে
রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে গত বছরের তুলনায় মোটা চালের দাম কেজিতে ৮ থেকে ১২ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের নভেম্বরে খুচরায় প্রতি কেজি মোট চাল পাইজাম ও ব্রি-২৮ মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকায়। দাম বেড়ে গতকাল তা বিক্রি হয় ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়।
পেঁয়াজ-আলুর দাম এখনো চড়া
আমদানি করার পরও দাম কমেনি পেঁয়াজের। আলুর দাম সামান্য কমলেও এখনো তা চড়া। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, আমদানি করা ভালো মানের পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা। আমদানি করা কিছু পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হতে দেখা গেছে।
আমদানির কারণে সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম কিছুটা কমে খুচরায় প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কমেছে সবজির দাম
শীতের আগাম সবজির সরবরাহ বাড়ায় রাজধানীর বাজারগুলোতে কমতে শুরু করেছে দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বেশ কিছু সবজির দাম প্রতিটিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে।