কূটনৈতিক প্রতিবেদক
দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। চিঠিতে তিন দলকে মূলত চারটি বার্তা দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন এবং শর্তহীন সংলাপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গতকাল জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে দেখা করে চিঠির কপি তুলে দেন। এ সময় তিন রাজনৈতিক দলকে একই চিঠি দেওয়ার কথা জানানো হয়। এর কিছু পর মার্কিন দূতাবাসের এক বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের চারটি বার্তার কথা জানানো হয়। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, এ চার অবস্থানের বার্তাই দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। গতকাল ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি এক বার্তায় বলেছেন, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরতে তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত হাস। বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান হিসেবে চারটি বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য হচ্ছে- ১. যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় এবং সহিংসতা পরিহার ও সংযমী হতে সব পক্ষকে আহ্বান জানায়। ২. যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে আরেকটি দলের চেয়ে বেশি আনুকূল্য দেখায় না। ৩. যুক্তরাষ্ট্র কোনো শর্ত ছাড়া সংলাপে বসতে সব পক্ষকে আহ্বান জানায়। ৪. গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া যারা বাধাগ্রস্ত করছে, তাদের ওপর আমরা থ্রি-সি ভিসানীতি সমভাবে প্রয়োগ অব্যাহত রাখব। পিটার হাস গতকাল বিকাল ৩টায় বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কাছে ডোনাল্ড লুর লেখা একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাসরুর মাওলা। পরে গণমাধ্যমকে ব্রিফিংয়ে মো. মুজিবুল হক চুন্নু জানান, মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত তাদের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর লিখিত একটি চিঠি নিয়ে এসেছেন। তিনি চিঠিটা আমাদের পার্টি চেয়ারম্যানকে হস্তান্তর করেছেন। পিটার হাস জানিয়েছেন, একই চিঠি আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি তিন দলকেই দেওয়া হচ্ছে। চুন্নু বলেন, এ চিঠির মূল বক্তব্য হলো যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ফ্রি, ফেয়ার ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। কী কথা হয়েছে- জানতে চাইলে সাংবাদিকদের বলেন, সভায় কথা অনেক হয়েছে, তবে সেগুলো আনঅফিশিয়াল। সেসব বিষয় নিয়ে বলতে চাই না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ডেভেলপমেন্ট পার্টনার। ৬ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাণিজ্য তাদের সঙ্গে। শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে তারা চায়, বাংলাদেশে একটি ভালো নির্বাচন হোক। তারা চায় নির্বাচনে যেন সব দল আসে। ভোটের সময় যেন সুষ্ঠু পরিবেশ থাকে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে কোনো বার্তা দেওয়া হয়েছে কি না- জানতে চাইলে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, নির্বাচন কীভাবে হবে, কীভাবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হয় তা একান্ত আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। নির্বাচনের পরিবেশ কেমন চাই বা জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে কি না, তা আমরা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে কেন বলতে যাব? সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলছি, আর তাদের সহযোগিতার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি।
চিঠি পাওয়ার কথা জানাল রিজভী : যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র একটি চিঠি পেয়েছে বিএনপি। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। তবে কখন কীভাবে কোথায় চিঠি পেয়েছেন, তা জানানো হয়নি।