রাজধানীতে পোশাক শ্রমিকদের অবরোধ খুলেছে সাভার গাজীপুরের সব কারখানা

রাজধানীতে পোশাক শ্রমিকদের অবরোধ খুলেছে সাভার গাজীপুরের সব কারখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মিরপুর ১৩ ও ১৪ নম্বরের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পোশাকশ্রমিকরা। গতকাল সকাল ৮টায় তারা প্রথমে মিরপুর ১৪ নম্বরে সড়কে অবস্থান নেন। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর খুলেছে সাভার ও গাজীপুরের সব কারখানা। কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুকুল আলম বলেন, সকালে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা মিরপুর ১৪ ও ১৩ নম্বর এলাকার সড়কে অবস্থান নেন। পরে তারা মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের দিকে যান। পৌনে ১১টায় সেখানে অবস্থান শেষে শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে পড়েন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বেশির ভাগই মিরপুর ১৩ ও ১৪ নম্বরের চিটাগং গার্মেন্টস, ভিশন, এমবিএম, লোডস্টার, সারোজসহ আশপাশের গার্মেন্টের শ্রমিক বলে জানা গেছে। পরে তারা মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর রাস্তার সামনে বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। এরপর সড়ক থেকে সরে গেলে ওই এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, তাদের বেতন ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। নতুন নির্ধারণ করা ১২ হাজার ৫০০ টাকা তারা মানেন না। এদিকে আশপাশে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মজুরি বাড়ানোর দাবিতে ২৩ অক্টোবর শুরু হওয়া শ্রমিকদের এ আন্দোলনের মধ্যে গত মঙ্গলবার পোশাক খাতের জন্য সরকার গঠিত মজুরি বোর্ড ১২ হাজার ৫০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে। তবে নতুন বেতনকাঠামো প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শ্রমিকরা। তারা ন্যূনতম মজুরি ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু মালিকপক্ষের দেওয়া ১২ হাজার ৫০০ টাকার প্রস্তাবই চূড়ান্ত করে শ্রম মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলাকালে কারখানা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ বিভিন্ন অভিযোগে শুধু আশুলিয়া ও সাভারে করা ৪০ মামলায় নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত প্রায় সাড়ে ২৩ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ৯৫ জন।

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, দীর্ঘ দুই সপ্তাহ মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক আন্দোলনের মুখে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা শতাধিক কারখানায় শুরু হয়েছে উৎপাদন। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সরেজমিন সকাল ৮টার দিকে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের ইউনিক, বাইপাইল, শিমুলতলা, জামগড়া, ছছতলা, নিশ্চিন্তপুর, নরসিংহপুর, ঘোষবাগ, কুন্ডলবাগসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় সব কারখানাতেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রবেশ করছেন শ্রমিকরা।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, পোশাকশ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম সাড়ে ১২ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণার পর গতকাল গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের সব কারখানা খুলেছে বলে জানিয়েছে শিল্পপুলিশ। সকাল থেকে শিল্পনগরী কোনাবাড়ীর বিভিন্ন কারখানায় দলে দলে প্রবেশ করে কাজ শুরু করে তারা। পুরোদমে চলছে উৎপাদন। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক, তেলিচালা, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী, জরুন, কাশিমপুর, ভোগড়ার কারখানাগুলোয় শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। এদিকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, ভোগড়া, জরুনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শিল্পপুলিশ, থানা-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় ছিলেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। গাজীপুর শিল্পপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহম্মেদ জানান, গাজীপুরের সব কারখানার পরিবেশ স্বাভাবিক, কোনো কারখানা বন্ধ নেই, শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী এলাকার স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড, তুসুকা গ্রুপের তুসুকা ডেনিম, তুসুকা জিন্স, তুসুকা ওয়াশিং, ফাইজা প্রভিন্স, এম এম নিটওয়্যার ও স্বাধীন গার্মেন্টসও চালু হয়েছে। এসব কারখানা সোমবার পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এ ছাড়া গাজীপুরের বন্ধ অন্য সব কারখানা সোমবার থেকে চালু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গাজীপুরে শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনায় বিভিন্ন থানায় ২৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১০৭ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার আবু তোরাব মোহাম্মদ শামছুর রহমান জানান, শ্রমিক আন্দোলনে ভাঙচুরে জড়িত সুনির্দিষ্ট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ