দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আ.লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। দলটির নেতাকর্মীরা উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন। দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণের প্রথম দিনে সহস্রাধিক মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এ সময় আ.লীগের দলীয় কার্যালয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ভিড় জমেছিল। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কর্মী-সমর্থকদের মিছিল-স্লোগানে দলীয় কার্যালয় ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে দলীয় পতাকা হাতে কার্যালয়ের সামনে আসেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। সকাল থেকে দিনভর নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে এক ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি হয়। মনোনয়ন ফরম ও জমা দেয়ার কার্যক্রম গতকাল শুরু হলেও আগামী মঙ্গলবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে মাঠে রয়েছে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ অধিকাংশ বিরোধী দল। আর এরই মধ্যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন তফসিল ঘোষণার পরপরই ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। গতকাল শনিবার দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে দলটি। একইদিন নির্বাচন কার্যক্রম নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশ আ.লীগ, জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, জাতীয় পার্টি (রওশন এরশাদ) ও বিকল্পধারা বাংলাদেশ। তবে বিরোধী শিবির এ বিষয়ে একেবারেই নিশ্চুপ রয়েছে। বিএনপি-জামায়াতসহ রাজপথে থাকা বিরোধী দলগুলো তফসিল ঘোষণা হলেও কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে। তারা দলীয় সরকারের অধীনে ভোটে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তেই অনড় রয়েছে।
দলের প্রথম মনোনয়ন ফরমটি সংগ্রহ করলেন শেখ হাসিনা : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন আ.লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সভাপতির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। এরপর উৎসবের আমেজে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। গতকাল সকাল ১০টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কার্যালয়ে শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকলেও তার পক্ষ থেকে গোপালগঞ্জ-৩ আসনের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদ আলী খান ও সাধারণ সম্পাদক বিএম সাহাবউদ্দিন আজম। এ সময় আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রথম দিনে ১০৬৪ মনোনয়নপত্র বিক্রি : আ.লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানিয়েছেন, প্রথম দিনে এক হাজার ৬৪টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলিস্তানের ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন। বিপ্লব বড়ুয়া জানান, আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ প্রথম দিনেই এক হাজার ৬৪টি মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছেন। যা থেকে আয় হয়েছে পাঁচ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে অনলাইনে ১৪ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। অনলাইনে বিক্রিকৃত মনোনয়নপত্র থেকে আয় হয়েছে আরও সাত লাখ টাকা। এতে প্রথম দিনে মনোনয়নপত্র বিক্রি করে মোট আয় হয়েছে পাঁচ কোটি ৩২ লাখ টাকা। প্রথম দিনে ঢাকা বিভাগে ২১৩টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯৮টি, সিলেট বিভাগ ৫৫টি, ময়মনসিংহ বিভাগ ১০৫টি, বরিশাল বিভাগে ৭৫টি, খুলনা বিভাগে ১২৫টি, রংপুর বিভাগে ১০৯টি এবং রাজশাহী বিভাগে ১৬৯টি দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে আ.লীগ। জানা যায়, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের মনোনয়নপত্র বিক্রির জন্য কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলা আর রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালের বিভাগের মনোনয়নপত্র বিক্রির জন্য তৃতীয় তলা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সব বিভাগের মনোনয়নপত্র জমা নেয়া হচ্ছে নিচ তলায়।
মনোনয়নপত্র বিক্রির কার্যক্রম পরিদর্শন করেন শেখ হাসিনা : গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রম পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, যেসব দল নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের সাধুবাদ জানাই, ধন্যবাদ জানাই। যাদের মানুষের ওপর আস্থা নেই, বিশ্বাস নেই, দল হিসেবে সুসংগঠিত নয়, তারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করতে অগ্নিসন্ত্রাস করলে এর পরিণতি ভালো হবে না। যারা করবে দেশের মানুষই তাদের শাস্তি দেবে। দেশের মানুষকে আমি সেই আহ্বানটাই জানাচ্ছি। আমাদের কষ্টে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারাকে কেউ যেন ব্যাহত করতে না পারে, এটাই আমার আহ্বান। তিনি আরও বলেন, দেশবাসী ভোট দিয়ে তাদের প্রিয় মানুষকে নির্বাচিত করবে। যারা সংসদে বসবে, আইন পাস করবে, রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। কাজেই এটা হচ্ছে জনগণের অধিকার। জনগণের অধিকার যারা কেড়ে নিতে চেষ্টা করবে, যারা অগ্নিসন্ত্রাস করবে, জনগণই তাদের প্রতিরোধ করবে। আমি জনগণের কাছে সেই আহ্বানটাই জানাই।
জোটবদ্ধভাবে ভোটে অংশ নিতে ইসিকে আ.লীগের চিঠি : আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধভাবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। গতকাল ইসি ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। এরই মধ্যে ইসিতে সাতটি দলের জোটবদ্ধ আবেদন এসেছে। এগুলো হলো— বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, তৃণমূল বিএনপি ও জাতীয় পার্টি (রওশন এরশাদ)। ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, আওয়ামী লীগ চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, জোটবদ্ধভাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। আর সভাপতির সইয়ে নমিনেশন দেবে তারা। তিনি আরও বলেন, কোন কোন দল তাদের সঙ্গে থাকবে এটা বলা নাই। দুটো পৃথক দল বলেছে যে, তারা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবে। তারা হলো— জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল আর ওয়ার্কার্স পার্টি। এছাড়াও মহাজোটের সঙ্গে দলীয় প্রতীক কুলা নিয়ে নির্বাচন করবে বিকল্পধারা বাংলাদেশ। তবে জোটগত সিদ্ধান্ত হলে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে যাবে এই দল। ইসিতে দেয়া চিঠিতে এমন তথ্য জানানো হয়।
নির্বাচনি টিম গঠন করবে ছাত্রলীগ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আ.লীগকে আবারও বিজয়ী করতে দেশের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে টিম গঠন করবে ছাত্রলীগ। এসব টিমকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগের জেলা ও মহানগর ইউনিটগুলোকে কেন্দ্রভিত্তিক এসব টিম গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি জেলা ও মহানগর ইউনিটকে কেন্দ্রভিত্তিক টিম গঠনের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। প্রতি টিমে সদস্য থাকবেন ২০ জন। সদস্যদের সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোটার হতে হবে। সংশ্লিষ্ট জেলা-মহানগরে গঠিত টিমগুলোকে কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ২৬ নভেম্বরের মধ্যে এসব টিম গঠন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় নির্বাচিত করে দেশ ও মানুষের স্বপ্ন-আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। তা বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। তার তিন সপ্তাহ পর হবে ভোটগ্রহণ। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হবে। সেক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমার জন্য ১৪ দিন সময় দেয়া হয়েছে এবং প্রচারের জন্য ১৯ দিন সময় রয়েছে। ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ করতে হয়। অর্থাৎ ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ থাকবে।