পর্দার আড়ালে সমঝোতার চেষ্টা: তফসিল কি পেছাবে?

পর্দার আড়ালে সমঝোতার চেষ্টা: তফসিল কি পেছাবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে ইতোমধ্যেই। ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় এবং ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল এখন পর্যন্ত বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির উভয় অংশই নির্বাচনের তফসিল কয়েকদিন পেছানোর সুপারিশ করেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে পর্দার আড়ালে নানা রকম সমঝোতার চেষ্টা চলছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আর এ রকম বাস্তবতায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের তফসিল এক সপ্তাহ বা ১০ দিন পেছাতে পারে বলে বিভিন্ন মহল মনে করছেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর একটি বড় অংশ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। সেই দাবিতে আজ থেকে দুই দিনের হরতাল পালন করছে দলটি।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টিও নির্বাচন প্রশ্নে বিভক্ত। জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদপন্থিরা ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছে, তারা নির্বাচনে যাবে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশ এখন পর্যন্ত নির্বাচনের ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। তারা কোন সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেনি। তবে, দুই অংশের মধ্যেই একটি মিল পাওয়া গেছে। দুই পক্ষই নির্বাচনের তফসিল কিছুদিনের জন্য পেছানোর অনুরোধ করেছে। জি এম কাদের এটি সরকারের বিভিন্ন মহলের কাছে জানিয়েছে যে, নির্বাচনের তফসিল অন্তত দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দিতে হবে। কারণ, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সকল দলগুলোকে নির্বাচনে আনা এবং অংগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্যই তফসিল পেছানো প্রয়োজন। অন্যদিকে আজ রওশন এরশাদের নেতৃত্বে তার অংশের নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তারাও নির্বাচনের তফসিল কয়েকদিন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেন। তারা অবশ্য বলেছেন যে, ৩০ নভেম্বর আয়কর জমা দেওয়ার শেষ সময়। কাজেই ৩০ নভেম্বরের পরে মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় নির্ধারণ করা এবং নির্বাচন কয়েকদিন পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতকালে উপস্থিত রওশনপন্থি অংশের নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন যে, রাষ্ট্রপতি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। তবে জাতীয় পার্টির জন্য নয়, বিএনপির সঙ্গেও পর্দার আড়ালে একটি সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে বিভিন্ন পশ্চিমা দূতাবাসগুলোর মধ্যস্ততায়।

বিএনপির একটি বড় অংশ এখন নির্বাচনে আসতে চায়। প্রধানমন্ত্রী গতকাল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রির আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, যেকোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসলে তাদেরকে স্বাগত জানানো হবে। বিএনপি যদি জ্বালাও-পোড়াও পরিহার করে নির্বাচনে আসে তাহলে তিনি তাদেরকে স্বাগত জানাবেন।

বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য বিভিন্ন মহলে চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে কয়েকটি দেশের দূতাবাস এ নিয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছে। বিএনপি নেতারাও নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে অন্যতম শর্ত হিসেবে নির্বাচনের তফসিলকে পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়টি প্রস্তাব করেছে। তারা বলছে যে, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপি এখন পর্যন্ত প্রস্তুত নয়। নির্বাচনের তফসিল কিছুদিন পিছিয়ে দিলে তখন তারা বিষয়টি বিবেচনা করবে।

রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে জি এম কাদের এবং রওশন এরশাদ দুইজনকেই বলা হয়েছে যে, ২৯ জানুয়ারি হলো বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর আগে নির্বাচনের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কাজেই নির্বাচন দুই-চারদিন পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি আলোচনা করতেই পারেন। তবে, এ ব্যাপারে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। তবে, সরকারের সূত্রগুলো বলছে যে, বিএনপি নয়, জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে আনার ক্ষেত্রে এবং আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার তারিখসহ বিভিন্ন বাস্তবতা বিবেচনা করে নির্বাচনের সময়সীমা যদি এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয় তাহলে আওয়ামী লীগ কোন আপত্তি করবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ