নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আজ শেষ হচ্ছে। বিএনপি এখন পর্যন্ত নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অটল রয়েছে। তারা নির্বাচনের তফসিলকে প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু এর মধ্যেও হাল ছাড়েনি বিদেশি দূতাবাসগুলো। বরং বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করছে পশ্চিমা কয়েকটি দূতাবাস। ইতোমধ্যেই বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে তারা কথা বলেছে। আন্দোলনের কর্মসূচি বন্ধ করে নির্বাচনে যেন বিএনপি আসে সে জন্য বিএনপির সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্নভাবে যোগাযোগ করছে অন্তত তিনটি দেশের কূটনীতিকরা। তারা বিএনপিকে বোঝাতে চাইছে যে, বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে এবং সহিংস আন্দোলনের পথ বেছে নেয়, তাহলে সেটি বিএনপির জন্য ভাল হবে না। তবে বিএনপির যে সমস্ত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকরা কথা বলছেন, তাদের কারোরই সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোন ক্ষমতা নেই। এই নেতারা তাদের অসহায়ত্বের কথাও বলেছেন। তারা বলেছেন যে দূতাবাসগুলোর যে বক্তব্য সেই বক্তব্যের সঙ্গে নীতিগত ভাবে তারা একমত, তাদের কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার তাদের নেই। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াই বিএনপির সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন এবং সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে যে, নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপিকে পশ্চিমা দেশগুলো একাধিক রকম পরামর্শ দিচ্ছে। প্রথমত, তারা আন্দোলনের কর্মসূচিকে স্থগিত রাখতে বলেছে। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের সমস্যাগুলো বিশেষ করে তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং অন্যান্য প্রসঙ্গগুলো নিয়ে কথা বলার জন্য বড় পরামর্শ দিচ্ছে। তৃতীয়ত, নির্বাচনের তফসিল নিয়ে যদি তাদের কোন সমস্যা বা আপত্তি থাকে, নির্বাচনের তফসিল যদি কয়েকদিন পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়টি তাদের নির্বাচনে যাওয়ার জন্য সহায়ক হবে বলে তারা মনে করে তাহলে এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও তারা কথা বলতে পারে এবং একটি সমঝোতাপূর্ণ অবস্থানে গিয়ে তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক এটাই বিদেশি দূতাবাসগুলো চায়। এর ফলে একটি অংশগ্রহণমূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে বলে বিদেশি দূতাবাসগুলো মনে করে।
আর বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং সেই নির্বাচনে যদি কোন কোন মহল বাঁধা দেয় বা নির্বাচন নিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি করে বা নির্বাচনে এমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে যা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিপন্থী, সে ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলো সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে না এই মর্মে ভিসা নিষেধাজ্ঞা সহ বিভিন্ন বিষয় সরকারের নজরে আনতে পারবে এবং নির্বাচন যেন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় সে জন্য তদারকিও করতে পারবে। কিন্তু বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে পরে বিদেশি দূতাবাসগুলো শুধু নির্বাচন কেমন হচ্ছে এটি পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া কিছুই করতে পারবে না।
ইতোমধ্যে বিএনপির একাধিক নেতাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হচ্ছে এবং এই যোগাযোগের মাধ্যমে তারা একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাহল বিএনপি যে পথে যাচ্ছে এই সহিংস পথ কোন রাজনৈতিক সমাধান নয়। এই রকম সহিংস পথে গেলে বিএনপির বা গণতন্ত্রের কারোরই কোনো লাভ হবে না। আর একারণে বিএনপি যেন দ্রুত তাদের একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সে ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলো জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিএনপি এই তৎপরতায় সারা দেয়নি বা অচিরেই সাড়া দেবে এমন কোন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে।