নিজস্ব প্রতিবেদক।
দেশে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো (এমএফএস) থেকে ঋণ নেওয়া বাড়ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার (এমআরএ) সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের চার কোটি আট লাখ ৫০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ঋণের মোট অর্থ ছাড় করেছে দুই লাখ ৪৯ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল এক লাখ ৯১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ঋণ নেওয়া বেড়েছে ৫৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা।
এমআরএভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ঋণের অর্থ ছাড় হয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
গতকাল রবিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এমআরএ আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াকুব
হোসেন। এমআরএর ‘মাইক্রোফাইন্যান্স ইন বাংলাদেশ, জুন ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তারা মূলত চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এমআরএর সনদপ্রাপ্ত ৭৩১টি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য দিয়েছে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীমউল্লাহ।
সভাপতিত্ব করেন এমআরএর নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মো. ফসিউল্লাহ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ইয়াকুব হোসেন বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঋণের অর্থ তোলা হয়েছে দুই লাখ ১৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। তিনি বলেন, আর্থিক অন্যান্য খাতের তুলনায় এই খাতে ঋণ আদায়ের হার ৯৮ শতাংশ এবং নারীর অংশগ্রহণ প্রায় ৯১ শতাংশ। পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে এই খাত অনন্য ভূমিকা পালন করছে।
ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো সারা দেশে আর্থিক সেবা প্রদানের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বঙ্গবন্ধু উচ্চশিক্ষা বৃত্তি এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে।
শেখ মোহাম্মদ সলীমউল্লাহ বলেন, ‘দেশে চাহিদা ও সরবরাহ বাড়লে অর্থনীতির কর্মকাণ্ড বাড়ে। আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এর ফলে দেশ উন্নতির দিকে যাচ্ছে। এই উন্নতির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করা দেশগুলো।
ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে যেতে পারে না, সেখানে এই প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা দিয়ে আসছে। মানুষ তাদের দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। তবে আমাদের এটিও দেখতে হবে যে কত মানুষ দারিদ্র্যের এই রেখা থেকে উঠে আসতে পেরেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন আমাদের নিত্যনতুন প্রযুক্তির কথা ভাবতে হবে। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, দক্ষতা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন গবেষণার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিহ্নিত করে গবেষণার ওপর জোর দিতে হবে।’
মো. ফসিউল্লাহ বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক অবদান রাখছে। গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে তারা কাজ করে যাচ্ছে। তাদের কাজ শুরু ঋণ প্রদান আর গ্রহণে সীমাবদ্ধ থাকছে না, তারা শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়নেও অবদান রাখছে। কভিডের সময় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে জনকল্যাণে।
তিনি বলেন, ‘আশা করছি, আমরা শিগগিরই এমআরআই ওয়ালেট ব্যবহার করতে পারব, যাতে লেনদেনপ্রক্রিয়া আরো সহজ হয়।’
প্রতিবেদন বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুন পর্যন্ত এমআরএর সনদপ্রাপ্ত ৭৩১টি এমএফআই তাদের ২৫ হাজার শাখার মাধ্যমে চলতি বছর গ্রাহকের কাছ থেকে সঞ্চয় গ্রহণ করে ৯০ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে এমআরএ খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির হার ২৬.৪১ শতাংশ। ঋণের স্থিতি এক লাখ ৫০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে ঢাকা বিভাগের মানুষ। এর পরই রয়েছে চট্টগ্রাম। পরবর্তী অবস্থানে রাজশাহী বিভাগের মানুষ। সবচেয়ে কম ঋণ নিয়েছে সিলেট বিভাগের মানুষ