দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণখেলাপিদের প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) বা ঋণ তথ্য ভাণ্ডারে ঋণখেলাপিদের তথ্য হালনাগাদ করছে। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণখেলাপিদের চিহ্নি করে তাদের তথ্য হালনাগাদ করছে।
যেসব ঋণখেলাপি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তারাও ইতোমধ্যে খেলাপি ঋণ নবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। ইতোমধ্যে অনেকে খেলাপি ঋণ নবায়ন করে নিয়মিত করেছেন। এর মধ্যে দেশের বড় ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন।
এদিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঋণখেলাপি প্রার্থীদের ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর করণীয় সম্পর্কে ইতোমধ্যে একটি নির্দেশনা দিয়েছে। এটি ইতোমধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
নির্বাচনি তফশিল ঘোষণার পর নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে অংশ নেওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঋণখেলাপিদের তথ্য নালনাগাদ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে খেলাপিদের তালিকা পাঠানো হলে তা যাচাই-বাছাই করতে সর্বোচ্চ ২ দিন সময় লাগবে। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজস্বভাবে সিআইবি হালনাগাদ করছে। তারাও নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের খেলাপিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ঠেকাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ৩০ নভেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। সেগুলো বাছাই করা হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। বাতিল হওয়া ও বৈধ মনোনয়নপত্রের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি করা হবে ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
সর্বশেষ সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী কোনো ঋণখেলাপি মনোনয়নপত্র দাখিল করার আগে খেলাপি ঋণ নবায়ন করেও তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। অর্থাৎ ৩০ নভেম্বরের আগে খেলাপি ঋণ নবায়ন করে প্রার্থী হতে পারবেন। আগে নিয়মে ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের কমপক্ষে ৭ দিন আগে খেলাপি ঋণ নবায়ন করতে হবে। এর আগে ছিল মনোনয়নপত্র দাখিল করার কমপক্ষে ১ মাস আগে খেলাপি ঋণ নবায়ন করতে হবে। আইন সংশোধন করে ঋণখেলাপিদের ছাড় দেওয়া হয়েছে ঋণ নবায়নের ক্ষেত্রে। একই সঙ্গে সরকারি খাতের বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধের ক্ষেত্রেও ছাড় দেওয়া হয়েছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের আগের বিল পরিশোধ করলে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন।
এদিকে করোনা ও বৈশ্বিক মন্দার কারণে ঋণখেলাপিদের বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য খেলাপি ঋণ নবায়ন করলে সংশ্লিষ্টরাও ওইসব ছাড় পাবেন। আগের নিয়মে খেলাপি ঋণ নবায়ন করতে প্রথম দায় হলে মোট কিস্তির ১০ শতাংশ, দ্বিতীয় দফা হলে ১৫ শতাংশ ও তৃতীয় দফায় হলে ৩০ শতাংশ জমা দেওয়ার বিধান ছিল। বর্তমানে এ ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে আড়াই থেকে ১০ শতাংশ জমা দিয়েই খেলাপি ঋণ নবায়ন করা যাবে। ফলে এ সুবিধা নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও পাবেন।
বর্তমানকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজস্ব উদ্যোগে সিআইবি হালনাগাদ করত। এখন সিআইবি অনলাইন হওয়ার কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেরাই করতে পারে। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে সিআইবি হালনাগাদ করার সুযোগ শাখা পর্যায়েও দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন থেকে কোনো ঋণখেলাপি শাখায় ঋণ নবায়ন করলে সঙ্গে সঙ্গে তার সিআইবি প্রতিবেশন হালনাগাদ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে বোতাম টিপেই মুহূর্তের মধ্যে ঋণখেলাপি প্রার্থীদের তথ্য পাওয়া যাবে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলে পর প্রার্থীদের তালিকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবিতে পাঠাতে হবে। সিআইবি ওইসব তালিকা দেখে ঋণখেলাপিদের শনাক্ত করে সেসব তথ্য নির্বাচন কমিশনে পাঠাবে। বাছাইয়ের সময় ঋণখেলাপিদের প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।
এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজস্বভাবে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস থেকে প্রার্থীদের তালিকা সংগ্রহ করে প্রধান কার্যালয়ে পাঠাবে এবং নিজেরা কোনো প্রার্থী ঋণখেলাপি কিনা তা যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তথ্য পাঠাবে। কোনো ঋণখেলাপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাতে কোনোক্রমেই বৈধ হতে না পারে সেদিকে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণখেলাপিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। তবে কৃষকদের ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি কৃষিঋণের সুদ ও আসলসহ সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণখেলাপিরা এর আওতায় পড়বেন না। তবে এসব ঋণ এক লাখ টাকার বেশি হলে তারা এই আইনের আওতায় পড়বেন।
এছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ গৃহনির্মাণ ঋণ দান সংস্থা, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের ঋণখেলাপিরাও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
এছাড়া কোম্পানি আইনে নিবন্ধিত কোনো কোম্পানি ঋণখেলাপি হলে ওই কোম্পানির পরিচালকরাও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
সূত্র জানায়, নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী এমন কয়েকজন ঋণখেলাপি ইতোমধ্যে তাদের খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছেন। ইতোমধ্যে সরকারি একটি ব্যাংকে একটি বড় শিল্প গ্রুপ তাদের খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছেন। একই ব্যাংকে আরও একজন খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও অনেক খেলাপি তাদের ঋণ নবায়নের জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।