দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনশ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কারা হচ্ছে তা চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রার্থী সিলেকশনের ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের বিবেচনায় যারা উত্তীর্ণ তাদের এবং যারা এবার উত্তীর্ণ হতে পারেননি তাদের সবাইকে নিয়ে আজ সকালে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আজ সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি ও দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হতে করণীয় নিয়ে নৌকা প্রতীকের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নির্দেশনা দেবেন। একই সঙ্গে দল যাকে মনোনীত করেছে তার পক্ষে বাকি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে নির্দেশ দেবেন। দলটির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে গত বৃহষ্পতিবার থেকে শনিবার টানা তিন দিন দলের মনোনয়ন বোর্ড বৈঠক করে দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে। গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও তৃতীয় দিনের মতো দলের মনোয়ন বোর্ডের সভা চলছিল। দলীয় সূত্র জানিয়েছেন, এটিই প্রার্থী সিলেকশনের সভার শেষ দিন। আজ সকাল মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাইকে নিয়ে বসছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিল্পব বড়ুয়া ২৪ নভেম্বর জানিয়েছেন, গণভবনে শেখ হাসিনা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা চাচ্ছেন দলের সবাই যেন ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। দলের অভ্যন্তরে তিনি কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বরদাশত করবেন না। মনোনয়ন পেলে অথবা না পেলে করণীয় কি হবে— সে সম্পর্কে তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন। একই দিন (আজ) রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৩, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে মনোনয়নপ্রাপ্তদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) লিখিতভাবে জানিয়ে রেখেছে। যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে তাহলে জোটগতভাবে নির্বাচনে যেতে হতে পারে এমন সম্ভাবনা থেকেই ক্ষমতাসীন এই দলটি ইসিকে জানিয়ে রেখেছিল। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থানে রয়েছে। ২৪ নভেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির একটি বৈঠক হয়, ওই বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই বৈঠকেও বিএনপির নীতিনির্ধারকরা ‘দলীয় সরকারের অধীনে ভোটে যাবে না’ আগের সেই সিদ্ধান্তেই ছিল। ফলে আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত নিশ্চিত বিএনপি শেষ পর্যন্ত ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাও আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে এমন দলগুলোর সঙ্গে জোটগতভাবে ভোটে অংশ নেয়ার দরকার নাও হতে পারে। বিএনপি নির্বাচনে এলে শরিকদের সঙ্গে আগের মতো আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচন করবে আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিএনপি না এলে প্রতিটি দলই নিজেদের মতো করে ভোটে অংশ নেবে, এতে মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সংখ্যাও বেশি দেখা যাবে। তবে আওয়ামী লীগের মিত্র দলগুলো নির্বাচনে আলাদা আলাদা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও আসন নিশ্চিতে অভ্যন্তরীণ সমঝোতা হতে এমন ধারণাই পাওয়া যাচ্ছে সূত্রগুলো থেকে। কারণ, অনেক শরিক দলের মাঠে কোনো প্রভাব নেই, রাজনৈতিক ভিত্তি নেই, শক্তিশালী সংগঠন নেই। ক্ষমতাসীন দল বা বিএনপির মতো বিরোধী দলের কাছে এরা মাঠপর্যায়ে কোনো পাত্তাই পাবে না। সে ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ সমঝোতা না হলে শরিকদের অনেককেই ফিরতে হবে শূন্য হাতে।
জোটগতভাবে ভোটে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোটের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রয়োজন না পড়লে জোট করতে যাব কেন? সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, জনগণের কাছে গ্রহণযোগত্য আছে এমন দলকেই জোটে নেয়া হবে। তবে জোটের বিষয়ে আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। কারণ, একটি জোটের বিপরীতে আরেকটি জোট হয়। সে ক্ষেত্রে জোটের প্রয়োজন না পড়লে জোট করতে যাব কেন? প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গত ১৮ থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত চার দিন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তিন হাজার ৩৬২ জন। মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে দলটির আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা। তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি। এবারের সংসদ নির্বাচনের জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।