নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা-২০২৩ এর ফল প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল। ফলাফলে সারা দেশ থেকে ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ জন। গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। মহামারি করোনাভাইরাসের পর চলতি বছরেই প্রথম সব বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এর আগে পরীক্ষা হয়েছে বিষয় কমিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে। চলতি বছর সব বিষয়ে পরীক্ষা হলেও এ পরীক্ষাও নেওয়া হয়েছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। সব বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার কারণে ফলাফলে পাসের হার কমেছে। আর ধস নেমেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে। গত বছরের থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্তি কমেছে ৮৩ হাজার ৬৮৭ জনের।
গতকাল সকালে গণভবন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে বলেন, অগ্নিসন্ত্রাসের হুকুমদাতাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অগ্নিসন্ত্রাসের যারা হুকুমদাতা ও অর্থদাতা তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেটাই করে যাচ্ছে। সরকার কারও রাজনৈতিক অধিকারে কখনো হস্তক্ষেপ করেনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সাল থেকে তারা এই অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ পোড়ানো, ৩ হাজারের ওপরে মানুষ পুড়িয়েছে। সেখানে প্রায় কয়েক হাজারের মতো মানুষ মারাই গেছে। লঞ্চ, গাড়ি, বাস, ট্রেন-কিছুই বাদ যায়নি। সেই সময় যারা আসামি ছিল তারা পলাতক ছিল। যখন এই বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের সমমনা দলগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করেছে, তারা বহাল তবিয়তে এসেছে।
এরপর দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন দীপু মনি।
ফল পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পাস করেছে ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। পাসের হার কমেছে ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। গত বছর সারা দেশ থেকে ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৭ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। চলতি বছরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৫ জন হলেও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। সে হিসাবে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার ৫২৮ জন বৃদ্ধি পেলেও জিপিএ-৫ কমেছে ৮৩ হাজার ৬৮৭ জনের। ফলাফল কমে যাওয়ার ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, আগে কম বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি খুব ভালো ছিল। কিন্তু সব বিষয়ে পরীক্ষা হওয়ার কারণে ফলাফল কিছুটা কমে গেছে। এ ছাড়া শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানরা জানান, যশোর শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজিতে শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক কম পাস করায় সার্বিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে। গতকাল সকালে ফল প্রকাশের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীরা আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে। ঢাকঢোল বাজিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ছাত্রছাত্রীরা। সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে ডেমরার সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এইচএসসি পরীক্ষায় এ কলেজ থেকে ৮৯৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ফল প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠান প্রধান অধ্যক্ষ মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, শিক্ষার্থীদের অসাধারণ কৃতিত্বের পেছনে রয়েছে শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের প্রচেষ্টা। এর সঙ্গে রয়েছে শিক্ষকদের সঠিক নির্দেশনা। মাইলস্টোন কলেজ থেকে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে ২ হাজার ৯৫৩ জন ছাত্রছাত্রী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করেছে। পাসকৃতদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬৭৩ জন। মাইলস্টোন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম বলেন, প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকরা এ সাফল্যের প্রকৃত দাবিদার। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পাস করেছে ৯৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ১৬৬ জন। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১ হাজার ১৩৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১ হাজার ১৩৩ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৭৯ জন।
পাসের হার-জিপিএ-৫ এ এগিয়ে ছাত্রীরা : এইচএসসির ফলাফলে পাস ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে এগিয়ে ছাত্রীরা। পরীক্ষায় ছাত্রদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৩ হাজার ২৩০ জন। অন্যদিকে ছাত্রীদের পাসের হার ৮০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। উত্তীর্ণ ছাত্রীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৯ হাজার ৩৬৫ জন।
এগিয়ে বরিশাল বোর্ড : চলতি বছর সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে বরিশাল বোর্ড। এ বোর্ডে ৮০ দশমিক ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। সবচেয়ে কম পাসের হার যশোর বোর্ডে। এ বোর্ডে ৬৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। অন্য বোর্ডের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ৪৪, রাজশাহী বোর্ডে ৭৮ দশমিক ৪৬, কুমিল্লা বোর্ডে ৭৫ দশমিক ৩৯, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭৪ দশমিক ৪৫, সিলেট বোর্ডে ৭৩ দশমিক শূন্য ৭, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৭০ দশমিক ৪৪, দিনাজপুর বোর্ডের ৭০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এ ছাড়া মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে ৯০ দশমিক ৭৫ শতাংশ, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৯১ দশমিক ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
কেউ পাস করেনি ৪২ প্রতিষ্ঠানে : এইচএসসি ও সমমানের ফলাফলে ৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। গত বছর শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫০টি। এবার ৯৫৩ প্রতিষ্ঠানে সব শিক্ষার্থী পাস করেছে। গতবার এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৩০টি।
বিদেশে কেন্দ্রে পাসের হার ৯৪ দশমিক ৩৯ : এ বছর বিদেশের ৮টি কেন্দ্রে ৩২১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩০৩ জন। পাসের হার ৯৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
পুনঃনিরীক্ষণ আবেদন : আজ সোমবার থেকে মোবাইল অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা যাবে। এ জন্য মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিনটি অক্ষর লিখতে হবে। এরপর স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে আবার স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে।