নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। এর আগে মাত্র দুটি দিন রয়েছে। কিন্তু এরমধ্যেই বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য বিভিন্ন মহল শেষ মুহূর্তের তৎপরতা চালাচ্ছে। আজ এবং গতকাল দুই দিন ধরে বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিভিন্ন কূটনীতিক মহল। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ করছে। কোনোভাবে নির্বাচনে বিএনপিকে আনা যায় কি না, সেই চেষ্টা তোদের অব্যাহত রয়েছে।
বিএনপির অবস্থান আগের চেয়ে অনেক নমনীয় হলেও তারা বলছে যে, সরকার তাদেরকে নির্বাচনে আসার কোনো সুযোগই দিতে চাচ্ছে না। নির্বাচনে আসার জন্য যে পরিবেশ দরকার সেই পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে না বলেই বিএনপি নির্বাচনে আসতে পারবে না-এমন মতামত বিএনপির শীর্ষ নেতাদের।
সুশীল সমাজের দুইজন প্রতিনিধি লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং তাকে বাংলাদেশের বাস্তবতা এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই-এমন একটি বার্তাও তাদেরকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তারেক জিয়া ইতিবাচক মনোভাব দেখাননি। তবে আলোচনা অব্যাহত রাখার কথা বলা হচ্ছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে ভোটের তারিখ পেছানোসহ বিভিন্ন শর্ত আরোপ করা হয়েছে। তবে সুশীল সমাজ এবং পশ্চিমা কূটনীতিকরা বিএনপিকে আগে কর্মসূচি প্রত্যাহারের যে অনুরোধ জানিয়েছে সেই কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধে বিএনপি সাড়া দেয়নি। বিএনপি বলছে যে, আগে সরকারকে ধরপাকড় বন্ধ করতে হবে এবং নির্বাচনের তারিখ পেছানোর ঘোষণা দিতে হবে।
ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের সাথে কূটনীতিক মহল যোগাযোগ করেছে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, বিএনপি যদি নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেয় সেক্ষেত্রে তারা নির্বাচনে আসার ব্যাপারটি চিন্তাভাবনা করে দেখতে পারবে। কিন্তু বিএনপি এখন পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। বিএনপি মনে করছে যে, প্রথমে যদি নির্বাচন কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেয় এবং বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানায়, সেক্ষেত্রে পুরো বিষয়টি বিএনপি বিবেচনা করতে পারে। কিন্তু যদি নির্বাচন কমিশন এই ধরনের ঘোষণা না দেয়, তাহলে বিএনপি আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করলে তা হবে এক অবমাননাকর এবং এর ফলে সংগঠন হিসেবে বিএনপির অস্তিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, আসলে বিএনপির নির্বাচনে আসার সময় এবং সুযোগ শেষ হয়ে গেছে। কোনো বিবেচনায় বর্তমান অবস্থাতে বিএনপি নির্বাচনে আসতে পারে না। কারণ এখন যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে সেক্ষেত্রে তাদেরকে কতগুলো কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে যে বিএনপি তাহলে এতদিন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে কেন আন্দোলন করল, বিএনপির এক দফার কী হবে ইত্যাদি। নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মানে বিএনপির পরাজয় এবং এই ধরনের পরাজয় মাথায় নিয়ে বিএনপি আদৌ নির্বাচনে ভালো ফলাফল করতে পারবে না।
তবে কূটনৈতিকমহল এবং সুশীল সমাজ মনে করছে যে, বিএনপি নির্বাচনে যাওয়া উচিত এই কারণেই যে আসলে পরখ করে দেখা যে নির্বাচন কতটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। সরকার যদি নির্বাচনে কোনো কারচুপি করতে চায় বা অবৈধ হস্তক্ষেপ করে তাহলে সেক্ষেত্রে সুশীল সমাজ এবং নির্বাচন কমিশন সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু যদি তারা শেষ পর্যন্ত কোনো রকম দাবি আদায় ছাড়াই নির্বাচনে যায় সেটি জনগণের কাছে যেমন হাস্যকর হবে, তেমনই নেতাকর্মীরাও এটি নিয়েই নির্বাচনের মাঠে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না।