নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে একমত হতে পারেননি। গত শনিবার রাতে রওশন এরশাদের বাসায় দুজনের বৈঠক হলেও দুই নেতাই নিজ নিজ অবস্থানে অনড় ছিলেন। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেন, তাঁদের বৈঠকে কোনো সমঝোতা হয়নি।
তবে আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনা চললে বরফ গলতে শুরু করবে বলে মনে করেন তিনি। গোলাম মসীহ জানান, রওশন এরশাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ হবে যেকোনো দিন।
জাতীয় পার্টি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিলেও এখনো দলের অস্থিরতা কাটেনি।
দল পরিচালনা ও নির্বাচন নিয়ে দুই নেতার টানাপড়েনের মধ্যে রওশনের গুলশানের বাসভবনে গিয়ে দেখা করেন জি এম কাদের।
বৈঠকে দুই নেতার মধ্যে দল ও মনোনয়নসহ কয়েকটি বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়। রাজনৈতিক আলোচনা হলেও বৈঠকে পারিবারিক আবহ ছিল। কিন্তু দুই নেতা নিজ অবস্থানে অনড় ছিলেন।
কেউ কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলেননি। জাপার একটি সূত্র জানায়, দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে যে কথা হয়েছে, তাতে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়া সমাধানে পৌঁছানো কঠিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রওশনপন্থী একজন নেতা বলেন, বৈঠকের শুরুতেই এরশাদপুত্র রাহগির আল মাহি এরশাদের (সাদ এরশাদ) রংপুর-৩ আসনে জি এম কাদেরের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়ের প্রসঙ্গে ওঠে। এই আসনে জি এম কাদের নির্বাচন করবেন বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। তিনি সাদ এরশাদকে রংপুর-২ ও ৪ আসন কিংবা অন্য যেকোনো আসনে নির্বাচন করার কথা বলেন।
জাপা সূত্র জানায়, রওশন এরশাদকে যেকোনো আসনে প্রার্থী হলে দল থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন জি এম কাদের। এ সময় রওশন এরশাদ দলের বহিষ্কৃত নেতা মসিউর রহমান রাঙ্গা, গোলাম মসীহসহ কয়েকজনের মনোনয়ন বিষয়ে কথা তোলেন। কিন্তু জি এম কাদের এ বিষয়ে তাঁর আগের অবস্থানে অনড় ছিলেন। কোনোভাবেই তিনি বহিষ্কৃতদের মনোনয়ন দেবেন না বলে তাঁর অবস্থান আবারও স্পষ্ট জানান।
রওশনপন্থী একজন নেতা বলেন, অনুসারীদের মনোনয়নের বিষয় চূড়ান্ত না হলে জি এম কাদেরের নেতৃত্বে নির্বাচনে যাবেন না রওশন এরশাদ। এ বিষয়টি বৈঠকে রওশন জানিয়েছেন।
এ অবস্থায় রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছেন। তাঁর অনুসারীদের ধারণা, যেকোনো সময় প্রধানমন্ত্রী সময় দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হলে এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
বৈঠকে সাদ এরশাদ উপস্থিত ছিলেন। গোলাম মসীহ, বিরোধীদলীয় নেতার মুখপাত্র কাজী মামুনূর রশিদ ওই সময় রওশন এরশাদের বাসভবনে থাকলেও বৈঠকে ছিলেন না।
জাতীয় পার্টি গত রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে রওশন এরশাদ, সাদ এরশাদ ও তাঁদের অনুসারীরা মনোনয়ন ফরম নেননি। যদিও রওশনপন্থীদের কেউ কেউ দাবি করেন, তাঁদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের মনোনয়ন ফরম দেওয়া হয়নি।
আগে থেকে দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে বিরোধ ছিল। এবার মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে সেই বিরোধ আরো তীব্র হয়। মূলত সাদ এরশাদের রংপুর-৩ আসনে জি এম কাদেরের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করায় নির্বাচনকেন্দ্রিক বিরোধে নতুন মাত্রায় পায়।
বৈঠক দলীয় নয়, পারিবারিক : চুন্নু
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের গত শনিবার রাতে রওশন এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জি এম কাদের রওশন এরশাদের বাসায় একা গেছেন। এটা তাঁদের পারিবারিক বিষয়। দলীয় কিছু হলে দলের মহাসচিব হিসেবে তিনি বৈঠকে থাকতেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে চুন্নু এ কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, ওই বৈঠকের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না তা-ও বলতে পারবেন না।
চুন্নু বলেন, ‘রওশন এরশাদ, সাদ এরশাদ এবং কে আর ইসলাম যদি নির্বাচন করতে চান, মনোনয়ন দেওয়া হবে। আমরা চাই, রওশন এরশাদ নির্বাচনে আসুক। আমরা তাঁকে সব ধরনের সহযোগিতা করব।’ তিনি দাবি করেন, জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কাঠামোয় কোনো বিভেদ নেই। জি এম কাদেরের নেতৃত্বের বাইরে কেউ নেই। জাতীয় পার্টি এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। জাতীয় পার্টি এখন অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। জাতীয় পার্টিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবকাশ নেই।
গতকাল ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।