দেশের রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না বলে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত দলটি আগের সেই সিদ্ধান্তেই অনড় রয়েছে। অর্থাৎ অন্যতম জনপ্রিয় এই দলটি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না। একইভাবে বিএনপির মিত্র হিসেবে পরিচিত অন্যতম বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীও দলীয় সরকারের অধীনে ভোটে আসছে না। বিএনপি-জামায়াত ছাড়া রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব রয়েছে এমন দলগুলোর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এলডিপি, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যসহ রাজপথে থাকা ছোট বিরোধী দলগুলোও দলীয় সরকারের অধীনে ভোটে আসছে না। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সংকটে রয়েছে নির্বাচন কমিশন ও সরকার। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘ভোটে বাইরের থাবা পড়েছে। দেশের অর্থনীতি ও পোশাকশিল্পকে বাঁচাতে হলে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, ‘আরেকটি দুর্ভাগ্যজনক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আমাদের নির্বাচনে কিন্তু বাইরে থেকে থাবা বা হাত এসে পড়েছে। আমাদের অর্থনীতি, আমাদের ভবিষ্যৎ অনেক কিছু রক্ষা করতে হলে নির্বাচনটাকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে।’
বিরোধী দলগুলো ভোটে না আসায় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও প্রতিযোগিতামূলক করা নিয়ে সমস্যায় রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও। দলটির শীর্ষনেতারা চাইছেন যেকোনো মূল্যে ভোট প্রতিযোগিতামূলক হোক। আর সে কারণেই দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। ২৬ নভেম্বর গণভবনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে করা মতবিনিময়কালে তিনি এমন নির্দেশনা দেন। ২০১৮ সালে দলীয় সরকারের অধীনে ভোটে অংশ নিয়েছিল বিএনপিসহ প্রায় সব বিরোধী দল। ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি যে অভিজ্ঞতা পেয়েছে তাতে তারা আর দলীয় সরকারের অধীনে ভোটে যেতে চাইছে না। দলটি সে কারণে এবার (দ্বাদশ) জাতীয় নির্বাচনেও ভোটে যাচ্ছে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের কাছে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক জানতে চেয়েছিল শেষ পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হচ্ছে কি না?
বিএনপি এ তফসিলের আলোকে ভোটে অংশ নিচ্ছে কিনা— জবাবে তিনি জানিয়েছেন, গত (একাদশ জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে ভোটে অংশ নিয়ে ছয় আসন পাওয়া গেছে, এবার না হয় ১০ গুণ বাড়িয়ে ৬০টি আসনই পাওয়া যাবে, এতে বিএনপির লাভ কি পাল্টা প্রশ্ন করেন প্রবীণ এই রাজনীতিক। অর্থাৎ তিনি নিশ্চিত করেছেন সর্বশেষ অনুষ্ঠিত দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। আর বিএনপি অংশ না নিলে জামায়াতে ইসলামীসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব আছে এমন দলগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসছে না। ফলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বা প্রতিযোগিতামূলক ভোট করার যে ইচ্ছার কথা সরকার ও ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল তা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলো শেষ পর্যন্ত ভোটে না এলে কীভাবে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে, এমন প্রশ্ন ক্ষমতাসীন দলের সামনেও এসেছে। ফলে দলটির শীর্ষনেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ চাচ্ছে তাদের প্রার্থীরা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উঠে আসুক। বিস্তারিত