নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমাদান শেষ। এবার ভোটের হিসাব-নিকাশ শুরু। বিএনপিসহ ১৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতি দলের বর্জন করা এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে রেকর্ডসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও সমর্থক। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে দলীয় প্রধানের ইঙ্গিত পেয়ে নৌকা প্রতীককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন নিজ দলের মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীরা। অধিকাংশ আসনে নৌকার প্রতীকের বিপক্ষে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী লড়াই করছেন। ফলে অধিকাংশ আসনেই নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ থেকে আসা স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন।
মনোনয়নপত্র জমাদান শেষে নির্বাচন কমিশন সূত্র ও আমাদের সময়ের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুসারে, সারাদেশে ৩০০ আসনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৩০টি রাজনৈতিক দল মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ২ হাজার ৭৪১ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের মোট ২ হাজার ৫৯ এবং
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৬৮২ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ইসি সূত্র জানায়, সারাদেশে সর্বোচ্চ ৪০ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ফেনী-৩ আসনে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার গোপালগঞ্জ-৩ আসনে মোট প্রার্থী আট।
গত ২৬ নভেম্বর গণভবনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী সবার সঙ্গে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সভায় তিনি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার কথা বলেন বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন। তাদের ভাষ্যমতে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপর চাপ প্রয়োগ না করতেও নৌকার প্রার্থীদের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন। এরপরই অধিকাংশ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এদিকে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে ৯৮টিসহ ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে মোট ১১৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩টি মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে ঢাকা-৮ আসন থেকে। গতকাল সন্ধ্যায় সেগুনবাগিচায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং অফিসার মো. সাবিরুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ঢাকা-৪ আসনে ৮ জন, ঢাকা-৫ ছয়, ঢাকা-৬ ছয়, ঢাকা-৭ সাত, ঢাকা-৮ ১৩, ঢাকা-৯ নয়, ঢাকা-১০ আট, ঢাকা-১১ সাত, ঢাকা-১২ তিন, ঢাকা-১৩ চার, ঢাকা-১৪ পাঁচ, ঢাকা-১৫ পাঁচ, ঢাকা-১৬ তিন, ঢাকা-১৭ সাত ও ঢাকা-১৮ থেকে সাত প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
সাবিরুল ইসলাম আরও জানান, আওয়ামী লীগ ১৩, জাতীয় পার্টি ১৭, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ১২, জাকের পার্টি ৬, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ৩, জাতীয় পার্টি (জেপি) ২, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ১২, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসএফ) ৬, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১, তৃণমূল বিএনপি ৭, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ১, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ১, বাংলাদেশ কংগ্রেস ৬, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেল বিটিএফ (২), ইসলামী ঐক্যজোট ১, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ৬, গণতন্ত্রী পার্টি ১, মুক্তিজোট ৪, গণ ফ্রন্ট ৩, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ২ ও স্বতন্ত্র থেকে ১৩ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশিদা সুলতানা বলেছেন, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩০টি দল আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। কোনো দল অংশগ্রহণ না করলে আইনগতভাবে নির্বাচন আয়োজনে কোনো বাধা নেই।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলো- আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি-জেপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ কংগ্রেস, তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট ও কয়েকটি দলের দাবির পর (পুনঃতফসিল করে) মনোনয়নপত্র জমার সময় ১৯ থেকে বাড়িয়ে ২৮ নভেম্বর করা হয়। সেবার নিবন্ধিত ৩৯টি দলই অংশ নেয়।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ছিল ৪৯৮টি এবং দলীয় মনোনয়নপত্র ছিল ২ হাজার ৫৬৭টি। পরে প্রতীক বরাদ্দের সময় চূড়ান্তভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিার সময় ১৯ থেকে বাড়িয়ে ২৮ নভেম্বর করা হয়। সেবার নিবন্ধিত ৩৯টি দলই অংশ নেয়।