নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
‘বিএনপিকে ভোটে আনার সব চেষ্টাই হয়েছে। এক রাতেই সব নেতার মুক্তির প্রস্তাবেও রাজি হয়নি দলটি।’—আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের এই বক্তব্যে নিজ দলের নেতারাই অস্বস্তিতে পড়েছেন। আর বিএনপির নেতারা করেছেন সমালোচনা।
গতকাল রোববার টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে ড. আব্দুর রাজ্জাক ওই বক্তব্য দেন। সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘২০ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার না করলে কি আর এই হরতালের দিন গাড়ি চলত? গণগ্রেপ্তার ছাড়া আমাদের কোনো গত্যন্তর ছিল না। যেটাই করা হয়েছে, আমরা চিন্তাভাবনা করেই করেছি।’
আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি, তার শরিক ও সমমনা দলগুলো। এই দলগুলো সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকার ও নির্বাচনের তফসিল বাতিলের দাবিতে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি পালন করছে।
গতকাল কৃষিমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার প্রচারের পর তাঁর বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। তাঁর এমন বক্তব্যে আওয়ামী লীগের নেতারাও অস্বস্তি এবং বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। একাধিক নেতা এই বক্তব্যকে ‘অপরিপক্ব’ বলে মন্তব্য করেন। তাঁরা বলছেন, তিনি দলের একজন সিনিয়র নেতা ও সরকারের মন্ত্রী। তিনি এমন কথা বলতে পারেন না। এমন বক্তব্য দিয়ে দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
ওই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে নির্বাচনে আসার আহ্বান সকলের জন্য একদম খোলা উঠোনে দাঁড়িয়ে বলেছি। কোনো ধরনের আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বা কাউকে বিশেষ সুবিধা বলেন, সুযোগ বলেন—এগুলো দিয়ে আমাদের দল কখনোই আলোচনা করেনি। ব্যক্তিগতভাবে কেউ যদি করে থাকে, তাহলে সেটা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার।’
কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী বিএনপি এমন প্রস্তাব পেয়েছিল কি না—জানতে চাইলে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘বলতে পারব না এমন প্রস্তাব কার কাছে এসেছে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি ছাড় পেয়ে পুলকিত হয়ে সংসদে আসন ভাগাভাগির জন্য আন্দোলন করছে না; বরং বিএনপির এই আন্দোলন দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলন, মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। আওয়ামী লীগের তরফ থেকে এই বক্তব্য তথা বিএনপিকে নির্বাচনে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব বিএনপির এই প্রতীতিকেই সত্য প্রমাণিত করেছে যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো অবস্থাতেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না; বরং তারা একটি প্রহসনের সাজানো নির্বাচনে বদ্ধপরিকর।’
বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই যে খেলা…একজন মন্ত্রী নাকি বিএনপিকে বলেছেন, আপনারা যোগ দেন আর আমরা জেলখানা থেকে সবাইকে ছেড়ে দেই। আরে ভাই, বিএনপি এই খেলায় কখনো অংশ নেয় না।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, কৃষিমন্ত্রীর এই স্বীকারোক্তিতে প্রমাণিত হয়, বিরোধী দলকে গ্রেপ্তার করে এবং কারাগারে বন্দী রেখে তামাশাপূর্ণ একতরফা ডামি নির্বাচনের নামে পূর্বনির্ধারিত ফলাফল ঘোষণার নীলনকশা বাস্তবায়নের চক্রান্তে সরকার জড়িত।
ড. আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্যে উদ্বেগ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘নির্বাচনে এলে জামিন দেওয়া হতো—তাঁর (আব্দুর রাজ্জাক) বক্তব্যে এটি স্পষ্ট যে সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার অপব্যবহার করছে।’
ওই বক্তব্যের বিষয়ে জানতেপক্ষ থেকে গতকাল কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের মুঠোফোনে কল করলে তিনি ধরেননি। এসএমএস করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।