মানবদেহে সংক্রমণ ঘটানো প্রধান জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ব্যবহৃত প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের বেশির ভাগ অ্যান্টিবায়োটিক প্রায় ৯০ ভাগ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর প্রথম ও প্রধান কারণ অ্যান্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ সংক্রমণে মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা মনে করছেন, রোগীর শরীর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হওয়ার কারণে ২০৫০ সালের দিকে হয়তো করোনায় মৃত্যুর চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ মারা যাবে।
দেড় বছর ধরে রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আসা ৭২ হাজার ৬৭০ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে এই ফল জানা গেছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে বিএসএমএমইউর শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘সংক্রামক ব্যাধি চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও কার্যকারিতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক জরিপের ফলাফলে এ তথ্য তুলে ধরেন ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বি চৌধুরী। অনুষ্ঠানে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার একটি গবেষণাপত্র তুলে ধরেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের হাসপাতালগুলোতে রোগীরা যেসব সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি হন, এর মধ্যে ৭২ শতাংশই ‘গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া’। এই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ব্যবহৃত সব অ্যান্টিবায়োটিক ৯০ শতাংশ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। রোগীকে সংক্রমণমুক্ত করতে বাধ্য হয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের বা তৃতীয় ধাপের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছেন চিকিৎসক।
এসব ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে যেসব অ্যান্টিবায়োটিক খুব ভালো কাজ করে– এমন ১০টি অ্যান্টিবায়োটিকে মিলছে না তেমন ফল। এর মধ্যে অ্যামোক্সাসিলিন ও সিপ্রোফ্লক্সাসিন কাজ করছে না ৯৭ ভাগের ক্ষেত্রেই। সেফিক্সিম, সেফট্রিয়াক্সনের মতো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে মাত্র ১০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে। এ ছাড়া ইমিপেনেম মাত্র ৮ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে, জেন্টামাইসিন ও কট্রিমক্সাজল ৯ ভাগ এবং সেফিক্সিম ও সেফট্রিয়াক্সন ও সেফিপিম ১০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে।
কমিউনিটিতে বিরল কিছু সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ‘এ সিনেটো ব্যাকটর’ নামে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বেড়েছে। এটি সাধারণ হাসপাতালের আইসিইউতে হওয়ার কথা। অর্থাৎ আইসিউর সংক্রমণ কমিউনিটিতে যাচ্ছে, যা আতঙ্কের।
ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে, যেগুলো তৃতীয় ধাপের অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে মজুত রাখা হয়েছে। একান্ত বিপদে না পড়লে এই গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যবহার করা উচিত নয়। কিন্তু বর্তমানে তা সাধারণ ওয়ার্ডেই অহরহ ব্যবহার হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ সর্দি-জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না। এ ক্ষেত্রে সামান্য অসুখেই প্রাণ হারানোর শঙ্কা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, অযাচিত ব্যবহারে মানুষ এখন অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না। তিনি উল্লেখ করেন, অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার কারণে দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৭০ হাজার রোগী মারা যান।