নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে ৪২ হাজার ১৪৯টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১০ হাজার ৩০০ ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যা মোট ভোট কেন্দ্রের ২৫ শতাংশ। গতকাল নির্বাচন কমিশনে এ ঝুঁঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা-সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রের এই তালিকা তৈরি করা হয়। এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে কমিশন। গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রের ক্ষেত্রে ১৬ সদস্যের একটি নিরাপত্তা দল পাহারা দেবে। এ ক্ষেত্রে অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য সংখ্যা তিনজনের পরিবর্তে চারজন হবে। এবারের নির্বাচনে ১ হাজার ৮০০-এর বেশি প্রার্থী ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনি প্রচারে সহিংসতার ঘটনায় এরই মধ্যে অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন। বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশের ৪০ হাজার ১৯৯টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ২৫ হাজার ৮২৭টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। বাকি ১৪ হাজার ৩৭২টি কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। আবার এসব কেন্দ্রের মধ্যে দুর্গম এলাকায় ১ হাজার ৬৩২টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের উপমহাপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের জারিকৃত পরিপত্র অনুযায়ী মাঠে থাকবে পুলিশ। পরিপত্রে সুষ্পষ্টভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এবং স্বাভাবিক কেন্দ্রের বিষয়ে কেমন ফোর্স থাকবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এর বাইরেও রিটার্নিং অফিসার এবং মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কিংবা পুলিশ সুপার পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
প্রার্থীর এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেবে ইসি : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থীর এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তাদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হবে। তার আগে প্রশিক্ষক তৈরি করবে সংস্থাটি। গতকাল ইসির নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা সব জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছে। এনিয়ে ইসির যুগ্ম সচিব ও নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, ইসি যাদের প্রশিক্ষণ দেবে তারা হবেন মাস্টার ট্রেইনার। যাতে এই মাস্টার ট্রেইনাররা প্রার্থীর অন্য এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। এ জন্য প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে প্রত্যেক প্রার্থীর পাঁচজন করে প্রতিনিধি থাকবেন। পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের জন্য মাস্টার ট্রেইনারদের গড়ে ব্যাচপ্রতি ৩০ জন হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের জন্য মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ ২৯ ডিসেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারির মধ্যে সুবিধাজনক তারিখে সংশ্লিষ্ট জেলা/ উপজেলায় রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে প্রত্যেক প্রার্থীর পাঁচজন করে প্রতিনিধি পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের জন্য মাস্টার ট্রেইনারদের গড়ে ব্যাচপ্রতি ৩০ জন হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। ওই প্রশিক্ষণে রিটার্নিং অফিসার, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিসার, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকতা, অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার ও ইটিআই কর্তৃক মনোনীত প্রশিক্ষকরা প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু ও সময়সূচি মোতাবেক নির্ধারিত স্থান ও তারিখে মনোনীত প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করা হলো। এ ছাড়া প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী সম্মানিত প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণের স্থান, সময় ও তারিখ উল্লেখপূর্বক আমন্ত্রণ জানাতে হবে। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রচারে জীবন্ত প্রাণীর ব্যবহারে হতে পারে জেল-জরিমানা : নির্বাচনি প্রচারে জীবন্ত প্রাণীর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আচরণবিধির এ আইন না মানলে হতে পারে জেল-জরিমানা। এমন নির্দেশনা দিয়ে তা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বাস্তবায়নের জন্য বলেছে নির্বাচন কমিশন। সংস্থাটির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান নির্দেশনাটি সব রিটার্নিং কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছেন, যখন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা প্রচারে ব্যবহার করছেন জীবন্ত প্রাণী। গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ হয়েছে, সোমবার হবিগঞ্জ-২ আসনের তিনবারের এমপি ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মজিদ খান নিজের প্রতীক হিসেবে জীবন্ত ঈগল নিয়ে প্রচারে নেমেছেন।
ইসির উপসচিব আতিয়ার রহমানের পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দেয়ালে লিখে কোনো প্রকার নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে পারবেন না প্রার্থী। কালি বা রং দ্বারা বা অন্য কোনোভাবে দেওয়াল ছাড়াও কোনো দালান, থাম, বাড়ি বা ঘরের ছাদ, সেতু, সড়ক দ্বীপ, রোড ডিভাইডার, যানবাহন বা অন্য কোনো স্থাপনায় প্রচারণামূলক কোনো লিখন বা অংকন করতে পারবেন না। এ ছাড়া নির্বাচনি প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রতীক হিসেবে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না।