উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদের হার বৃদ্ধিকে অন্যতম কৌশল হিসাবে ব্যবহার করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) শুরু থেকেই সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে ওভার নাইট কলমানি মার্কেটেও। সর্বশেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবারে কলমানিতে লেনদেনের হার ছিল ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ওই দিন চড়া সুদে লেনদেন হয় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। যদিও ২০২২ সালের জানুয়ারিতে কলমানির সুদের হার ছিল ২ দশমিক ৭২ শতাংশ। সেই হিসাবে দুই বছরের ব্যবধানে কলমানির গড় সুদহার বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি, যা বিনিয়োগ ও উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ কর্মদিবসে কলমানির গড় সুদের হার ছিল ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর গত বছরের (২০২৩) ১০ জানুয়ারি এই সুদের হার ছিল ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। তার আগের বছরের (২০২২) একই তারিখে কলমানির গড় সুদের হার ছিল ২ দশমিক ৭২ শতাংশ। সেই হিসাবে মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে কলমানির সুদের হার বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তবে বিদায়ী বছরের শেষ কর্মদিবসে সুদের হার ছিল ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংক খাতে টাকার বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। কয়েকটি ব্যাংকে তারল্যসংকট রয়েছে। এসব কারণে কলমানিতে ধার নিয়ে নগদ টাকার চাহিদা মেটাচ্ছে অধিকাংশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে সুদের হার খানিকটা বেশি হলেও সেদিকে গুরুত্ব কম বলা যায়।
সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক ধীর। আবার অধিকাংশ ব্যাংক ডলার কিনতে প্রচুর নগদ টাকা ব্যয় করেছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ছয় মাসে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে টাকা বাজার থেকে তুলে নিয়েছে। এতে ব্যাংকগুলো তারল্যসংকটে পড়েছে। নগদ টাকার চাহিদা পূরণ করতে কলমানিতে ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অর্থ পাচার, ডলারের দাম বাড়ায় ব্যাংকে তারল্যসংকট দেখা দিয়েছে। তারল্যসংকটের মোকাবিলা করতে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে চড়া সুদেও টাকা ধার নিচ্ছে।’
জানা গেছে, ব্যাংকগুলো দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে একে অন্যের কাছ থেকে এক দিনের জন্য টাকা ধার নেয়। একে কলমানি বাজার বলা হয়। ব্যাংক যখন টাকা বা তারল্যসংকটে পড়ে, তখন কলমানিতে ধার নেয়। সাধারণত নগদ টাকার চাহিদা বাড়লে কলমানির চাহিদা বাড়ে এবং তারল্যসংকট কমলে কলমানির চাহিদা কমে যায়। আশির দশকের গোড়ার দিকে কলমানি বাজার চালু হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জন্য সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। টাকার সরবরাহ কমাতে সুদের হার বাড়ানোর নীতি নিয়েছে। সরকারের ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদহারের ভিত্তিতে স্মার্ট সুদহার গত জুলাইয়ে চালু করেছে। এর প্রভাব কলমানির সুদহারের ওপরও পড়েছে। পাশাপাশি গত ছয় মাসে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রির মাধ্যমে বাজার থেকে নগদ টাকা তুলে নিয়েছে। এতে বাজারে টাকার সংকট সৃষ্টি হয়েছে।