বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যের দাম নিম্নগতি হওয়ায় এ বছর মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির হিসাবে এ বছর বিশ্ব মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং আগামী বছর ৪ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
সংস্থাটির বিশ্লেষণ অনুযায়ী অর্থনীতির গতি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো এগোচ্ছে। এজন্য বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিও বাড়িয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটুলক’ প্রতিবেদনের জানুয়ারি সংস্করণ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে চলতি বছর, ২০২৪ সাল শেষে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং পরের বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে ৩ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। গত অক্টোবরের তুলনায় এবার ২ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়েছে পূর্বাভাস দিলো সংস্থাটি।
প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির দেশগুলো খুব দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদ হার বৃদ্ধি, বিশেষ আর্থিক সুবিধা গুটিয়ে আনা এবং আর্থিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে নেওয়া উদ্যোগগুলোর কারণে মূল্যস্ফীতির গতি নিম্নমুখী হয়েছে। বেশির ভাগ অঞ্চলে প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত কমছে মূল্যস্ফীতির হার। তবে মুদ্রানীতি কঠোর করার প্রভাবে প্রবৃদ্ধির গতিও কম হবে। তবে আইএমএফ সতর্ক করে বলেছে, করোনা অতিমারি পরবর্তী অর্থনীতির গতি ঠিক রাখতে যে প্রণোদনা এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছিল সেগুলো গুটিয়ে আনা হচ্ছে। এই কার্যক্রম যদি দ্রুত গতিতে করা হয়, সেক্ষেত্রে চাপ তৈরি হবে। ভূরাজনীতি নিয়ে নতুন উত্তেজনা, বিশেষ করে লোহিতসাগরে চলমান সংঘাত সরবরাহ ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করছে। মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক হওয়ায় মূল্যস্ফীতির এই হার আরও দীর্ঘ সময় থাকতে পারে। এছাড়া রাজস্ব বাড়ানোর চাপে কর বৃদ্ধি, সম্পদমূল্য কমে যাওয়া, সরকারি ব্যয় কমিয়ে আনার মতো বিভিন্ন বিষয় মূল্যস্ফীতি কমাতে বাধা তৈরি করতে পারে।
আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩ সালে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর এ বছর ২ দশমিক ১ শতাংশ এবং পরের বছর ১ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসতে পারে। ইউরোপীয় অঞ্চলে গত বছর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পর ২০২৪ সালে শূন্য দশমিক ৯ এবং ২০২৫ সালে ১ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। মূলত ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রভাব পুরো ইউরোপের অর্থনীতিতে পড়ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গৃহস্থালি জ্বালানি ব্যবহারে ভর্তুকি বৃদ্ধি, প্রকৃত আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ইউরোপের অর্থনীতি।
উদীয়মান দেশগুলোর জন্য এ বছর ৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ, যা পরের বছর ৪ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। উন্নয়নশীল এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালে ৫ দশমিক ২ শতাংশ থেকে এ বছর কমে ৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে। এর মধ্যে ভারতের প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাড়ে ৬ শতাংশ। গত অক্টোবরের পূর্বাভাসের তুলনায় ডিসেম্বর ২ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে।