নিজস্ব প্রতিবেদক
এবার নিত্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে মাঠে নামছে পুলিশ, অবৈধ মজুতদারদের তালিকাও করা হচ্ছে। অবৈধভাবে মজুতের প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। এরই মধ্যে দেশের সব ইউনিটকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রগুলো বলছে, সরকার নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে চায়। নিত্যপণ্যের মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে তৎপর হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পাঁচ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে সমন্বিত বৈঠক করেছে। গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাণিজ্য, অর্থ, খাদ্য, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ নীতিনির্ধারণী বৈঠকে অংশ নেন। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট ও অবৈধ মজুতদার রয়েছে, তা সব মন্ত্রণালয়ই স্বীকার করে নেয়। সিন্ডিকেট সদস্য ও অবৈধ মজুতদারদের কিছু কিছু নাম মন্ত্রণালয়গুলোর হাতে থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। এবার সরকার এই সিন্ডিকেট সদস্য ও অবৈধ মজুতদারদের সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য-প্রমাণসহ শনাক্ত করতে চায়। সেই লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশের পণ্যভিত্তিক উৎপাদন তথ্য পর্যালোচনা করা হবে। সেসব পণ্যের চাহিদা কত, আমদানি কত, কোন বছর আমদানি হয়েছে, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। এলসি তথ্য পর্যালোচনা করবে সরকার। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কী পরিমাণ পণ্য আসছে, তা নজরদারিতে থাকবে। তাদের গুদাম পরিদর্শন করা হবে। এলসি করা পণ্য দেশে আসার পর বন্দর থেকে কী পরিমাণ খালাস হয়েছে, খালাস হওয়ার পর কোন প্রতিষ্ঠানে এবং কোন গুদামে যাচ্ছে, তাও নজরদারিতে রাখবে সরকার। এই বিষয়গুলো নিয়ে তথ্য সংগ্রহের পর যাদের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সভা শেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান জানিয়েছিলেন, সরকার সব কিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কোথায় কারা কীভাবে পণ্য মজুত করছে, সিন্ডিকেট করছে—তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। তাদের সুনির্দিষ্ট করার পর সব কিছু সুস্পষ্ট হলেই সরকার কঠোর অ্যাকশনে যাবে। প্রয়োজনে জেল-জরিমানার পাশাপাশি ব্যবসায়িক লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
এদিকে পুলিশ সূত্র জানায়, পাঁচ মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী সভার সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেশের সব ইউনিটকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা বাস্তবায়নে অবৈধ মজুত রয়েছে, এমন গুদাম শনাক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারা অবৈধভাবে পণ্য মজুত করে অস্বাভাবিকভাবে মূল্য বাড়াচ্ছে, তাদের বিষয়েও অনুসন্ধান চালানো হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার সকালে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে অপরাধ পর্যালোচনা সভা হয়েছে। ওই সভায় আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। রোজা শুরুর আগেই যাতে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে সেজন্য নজরদারি জোরদারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পণ্য সরবরাহ চেইনের ওপর নজর রাখা হবে।