বিশেষ প্রতিনিধি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ঢাকাসহ সারা দেশে হরতাল-অবরোধের নামে বাসে-ট্রেনে ধারাবাহিকভাবে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তবে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু তারপরও নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ের সৃষ্ট আতঙ্ক ও সহিংসতার শঙ্কা এখনো কাটেনি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আশঙ্কা করছে, ট্রেন, বিদ্যুেকন্দ্র, টিভি স্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আক্রান্ত হতে পারে। পাশাপাশি রয়েছে জঙ্গি হামলার আশঙ্কাও। এ কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার ও বাহিনীর সদস্যদের তত্পরতা বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেশের সব মেট্রোপলিটন পুলিশ, হাইওয়ে, রেলওয়ে ও রেঞ্জ ডিআইজিসহ ইউনিটগুলোকে চিঠি দিয়ে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
গত ১৭ জানুয়ারি পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (গোপনীয়) এ এফ এম আনজুমান কালামের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে সড়ক পথে যাতায়াতের পাশাপাশি জনসাধারণের রেলপথে ভ্রমণ বা যাতায়াতের প্রবণতা বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দুষ্কৃতকারীরা রেলস্টেশন ও ট্রেনে অগ্নিকাণ্ড বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তথা কেপিআইসহ বিদ্যুেকন্দ্র, টিভি সেন্টার ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। এসব স্থাপনায় জঙ্গি হামলার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো তত্পর হওয়া প্রয়োজন।’
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত নভেম্বর মাস থেকেই সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়। তারপরও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্বৃত্তরা ধারাবাহিকভাবে বাস ও ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করে । নির্বাচনের দুই দিন আগেও রাজধানীতে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুড়ে মারা যান চার যাত্রী। নির্বাচনের পর বাস ও ট্রেনে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনা আর ঘটেনি। তবে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আবারও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে আন্দোলনের নামে আবারও ভাঙচুর ও আগুনের ঘটতে পারে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, গত ২৫ জানুয়ারি ডিআইজি মো. মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া চট্টগ্রাম রেলওয়ে জেলা পরিদর্শন করেন। তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে রেলপথে নাশকতা প্রতিহত করার লক্ষ্যে একনিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশ দেন। মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা সব স্টেকহোল্ডার নিয়ে বসেছি। দফায় দফায় মিটিং করেছি। গত নভেম্বর মাস থেকেই এটা শুরু হয়। তারপর দফায় দফায় মোডিফাই করি। রেলের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাই অব্যাহত আছে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচন বর্জন করা দলগুলোরও সহিংস তত্পরতা নেই। ফলে মাঠ পুলিশের মধ্যে ঢিলেমি আসতে পারে। এই সুযোগে যে কোনো ধরনের হামলা ও নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে। তাই মাঠ পুলিশের তত্পরতা বাড়ানোর জন্য এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।