গরুর মাংসের বাজারের ‘ক্ষণিকের’ স্বস্তি হারিয়ে গেছে। ভেঙে পড়া সিন্ডিকেট ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় দাম বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এর মধ্যে প্রতিবছরের মতো এবারও শবেবরাতকে ‘উপলক্ষ’ বানিয়ে গরুর মাংসের দাম আরেক দফা বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা। মাংস ব্যবসায়ী সমিতির যুক্তি- গরুর দাম বেড়ে যাওয়ায় মাংসের দাম বেড়েছে। তবে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, মাংসের বাজারে নৈরাজ্য চলছে মূলত নজরদারির অভাবে।
গরুর মাংসের বাজারের সর্বশেষ ওঠানামার গল্প শুরু হয় গত নভেম্বরে। ওই সময় এক কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা। এর মধ্যে শাজাহানপুরের মাংস বিক্রেতা খলিল আহমেদসহ রাজধানীর আরও কয়েক ব্যবসায়ী ৫৯৫ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি শুরু করেন। তাদের দেখাদেখি অনেকে দাম কমান। আর এতেই পাল্টে যায় রাজধানীর গরুর মাংসের বাজার; ভেঙে পড়ে সিন্ডিকেট; দোকানে ভিড় বাড়ে ক্রেতাদের। খলিলের এমন সাহসী উদ্যোগকে সাধুুবাদ জানায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও। কিন্তু অনেক বিক্রেতার রোষানলেও পড়েন তিনি। গরুর মাংসের দাম নির্ধারণে একপর্যায়ে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) ও মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে ভোক্তা অধিদপ্তর। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী সমিতি ও বিডিএফএ আলোচনা করে ৬৫০ টাকায় মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তা ছিল ক্ষণস্থায়ী। দাম বাড়াতে আবারও মরিয়া হয়ে ওঠে সিন্ডিকেট। মাত্র দেড় মাসের মাথায় নির্ধারিত মূল্যকে বাতিল করে দেয় মাংস ব্যবসায়ী সমিতি। মূলত এর পর থেকেই দাম বাড়তে থাকে। এখন রাজধানীর কোথাও কোথাও ৮০০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে মাংস।
সরকারি বিপণন সংস্থা- ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এক মাসের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।
মাংসের দাম আবার বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘মাংস ব্যবসায়ীরাই দাম নির্ধারণ করলেন, তারাই আবার তা বাতিল করলেন। আমরা তো আর দাম বেঁধে দিতে পারি না।’
মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তজা আমাদের সময়কে বলেন, ‘গরুর দাম বর্তমানে বেড়ে গেছে। মাঝে তিন মণ ওজনের গরু ৮৫ হাজারেও পাওয়া গেছে। এখন তা ৯৫ হাজারে কিনতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে দাম বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। এতেও লোকসান হচ্ছে। আমি তো কমে বিক্রি করছি। কেউ কেউ ৮০০ টাকাও বিক্রি করছে।’
আগের দাম বাতিলের বিষয়ে গোলাম মুর্তজা বলেন, এখন থেকে বাজারের চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে মাংসের দাম নির্ধারণ হবে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন- কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন মনে করেন, ‘গরুর মাংসের বাজারে একেবারেই নজরদারি নেই। আগে সিটি করপোরেশন দাম বেঁধে দিত, এখন সেটিও নেই। এ নিয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরেরও মাথাব্যথা নেই। নজরদারির অভাবে গরুর মাংসের বাজারে লুটপাট চলছে।’
খলিল গোস্ত বিতানের মাংস বিক্রেতা খলিল আহমেদ জানান, তাকেও মাংসের দাম বাড়াতে হয়েছে। ৬৫০ থেকে দাম বাড়িয়ে এখন ৬৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
এখনো কম দামে মাংস বিক্রি সম্ভব বলে মনে করেন বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম। তিনি বলেন, ‘মাংস ব্যবসায়ীরা গরুর মাংসের দাম কখনই নির্ধারণ করে দেয়নি। বাতিল হবে কী! এ খাতে অনিয়ম, চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট না থাকলে কম দামে মাংস বিক্রি করা সম্ভব।’