টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে। সরকার গঠনের পরপরই আওয়ামী লীগ নানামুখী চাপে রয়েছে।যদিও বাইরে থেকে দৃশ্যমান হয় যে, আওয়ামী লীগ একটি স্বস্তির সুসময় পার করছে। আওয়ামী লীগ এতো স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আগে কখনো ছিল না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে অনেকগুলো অস্বস্তি ক্রমশ দানা বেঁধে উঠেছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে অস্বস্তি বাড়ছে৷ নতুন সরকারের সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন চ্যালেঞ্জ।
আওয়ামী লীগের জন্য যে চ্যালেঞ্জগুলি ক্রমশ দানা বেঁধে উঠছে, তার মধ্যে রয়েছে;
১. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ: দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে আওয়ামী লীগ সরকার তার প্রথম অগ্রাধিকার হিসাবে চিহ্নিত করেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোন কাজেই এখন পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক ফলাফল আসছে না। সামনে রোজা, এই রোজায় দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। আর এ রকম পরিস্থিতি হলে সরকারের জন্য সেটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হবে।
এর মধ্যেই বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব অন্যান্য ক্ষেত্রে পড়তে পারে বলেও অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নেয় এবং শেষ পর্যন্ত সফল হয় কিনা তার উপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।
২. ইউনূস ইস্যু: ড. ইউনূস ইস্যু ক্রমশই পুঞ্জীভূত হয়ে উঠছে। ইউনুস দুর্নীতি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ থেকে বাঁচার জন্য এটিকে ক্রমশ একটি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করার চেষ্টা করছেন। তিনি এখন গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে জোরেশোরে কথা বলছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা এবং অসত্য মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে ইউনুস এখন অনেকদূর এগিয়ে গেছেন এবং তিনি তার অর্থ আত্মসাৎ এবং অর্থপাচার ইস্যুকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে মরিয়া চেষ্টা চালাবেন এটা সকলেই বুঝতে পারছে। ড. ইউনুস ইস্যু সরকার এর জন্য আগামীতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
৩. বিরোধী রাজনৈতিক: আওয়ামী লীগের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ক্রমশ সংঘবদ্ধ হচ্ছে। বিএনপি ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। এই সিদ্ধান্ত রাজনীতির মাঠে একটি নতুন পরিস্থিতি তৈরি করবে। এর ফলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তারা তাদের ঢিমেতালের আন্দোলন অব্যাহত রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে এবং এটি সরকারের জন্য একটি সার্বক্ষণিক চাপ হিসেবে কাজ করতে পারে বলেও বিভিন্ন মহল মনে করছে৷
৪. আওয়ামী লীগের একলা চলো নীতি: আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে একলা চলো নীতি গ্রহণ করেছে। ১৪দল সহ অন্যান্য শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যোগাযোগ নেই বললেই চলে। এরকম একটি পরিস্থিতি যে কোন সংকটে আওয়ামী লীগের জন্য নেতিবাচক হতে পারে। আর আওয়ামী লীগ একলা থাকলে তার শত্রুর সংখ্যা বেড়ে যায়। এটিও আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় ভয়ের কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৫. অভ্যন্তরীণ কোন্দল: আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ক্রমশ বেড়েছে এবং সামনের দিন গুলোতে যদি এই কোন্দল অব্যহত থাকে তাহলে সেটি আওয়ামী লীগের জন্য এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি করবে এবং এটি আওয়ামী লীগকে এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে নিয়ে যেতে পারে বলে অনেকে মনে করছে।
সামনে উপজেলা নির্বাচন এবং এই উপজেলা নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ-আওয়ামী লীগের লড়াই বাড়তে থাকে তাহলে তা আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় ধরনের সংকট তৈরি করবে বলেই অনেকে মনে করছেন। তাই আওয়ামী লীগের জন্য স্বস্তির সময় নেই। সামনের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগের জন্য অপেক্ষা করছে অনেক চ্যালেঞ্জ এবং কঠিন সময়।