নিজস্ব প্রতিবেদক।
সরকার ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল যে সার্কুলার দিয়েছে তাতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা সকল ধরনের নাগরিক সুযোগ সুবিধা হারাতে যাচ্ছে বলে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী পয়লা জুলাই থেকে এই সার্কুলার কার্যকর করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সমস্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো সার্কুলারে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের তথ্য অনুযায়ী ইচ্ছাকৃত ভাবে ঋণখেলাপিদের চিহ্নিতকরণের কাজ ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হবেন তাদের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা সব ধরনের নাগরিক সুযোগ সুবিধা হারাতে যাচ্ছেন। তাদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে যে নিষেধাজ্ঞাগুলো আরোপ করা হবে তার মধ্যে রয়েছে-
১. বিমান ভ্রমণ করতে পারবেন না: স্বেচ্ছা ঋণখেলাপিরা বিদেশ যেতে পারবেন না। তাদের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে এবং তারা বিমানে ভ্রমণের অধিকার হারাবেন। এর ফলে যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হবেন, তাদের ওপর বিদেশ যাওয়া এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হল।
২.বাড়ি, জমির ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন না: যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হবেন তারা বাড়ি, জমির ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন না নিজের নামে। এ ধরনের কোনো কিছু তাদের থাকলে সেটা তারা বিক্রিও করতে পারবেন না।
৩. গাড়ি, কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন না: ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা তাদের যে গাড়ি এবং কোম্পানির শেয়ার এবং অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কোনো কিছুই কেনাবেচা করতে পারবেন না। যদি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসাবে কেউ তালিকাভুক্ত হন তাহলে তিনি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদের যোগ্যতা হারাবেন এবং ঐ পদ থেকে তাকে সরাতে হবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হলে শেয়ার বাজার থেকে তার পুঁজি তোলা বন্ধ হয়ে যাবে এবং নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করতে পারবেন না এবং নতুন নিবন্ধন করতে পারবেন না। এছাড়াও ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে আরও কিছু ব্যবস্থা তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে অন্য জায়গায়। বলা হচ্ছে যে, একজন ঋণখেলাপি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি নাকি তিনি ব্যবসায়িক সংকটের কারণে বা জটিল পরিস্থিতির কারণে ঋণখেলাপি হয়েছে তা বিবেচনা কে করবে? এই বিবেচনার দায়িত্ব কার ওপর বর্তাবে বা এটি রাজনৈতিক বিবেচনায় নির্ধারণ করা হবে কিনা সেটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ যদি একজন ব্যক্তিকে কোন ব্যাংক বিচার বিশ্লেষণ না করে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ঘোষণা করেন এবং সেটি নিয়ে যদি তিনি আদালতে যান তাহলে একটি ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আবার অনেক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি যদি ব্যাংকের সাথে সুসম্পর্ক রেখে নিজেকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তালিকা থেকে মুক্ত করতে পারেন সেটাও একটা বাজে পরিস্থিতি তৈরি করবে। তাই ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে যে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তালিকা যেন নিরপেক্ষ হয়। যিনি সত্যি সত্যি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি তিনি যেন এই তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হন সেটি নিশ্চিয়তার দায়িত্ব ব্যাংকগুলো। সেটি যদি না করা যায় তাহলে এই উদ্যোগ ভেস্তে যাবে