নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ এবং অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গতকাল বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাধারণ অধিশাখা থেকে পাঠানো এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশে ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছরে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রাপ্ত পত্র এই সঙ্গে পাঠানো হলো।’
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বর্ণিত বিষয়ের সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধি সম্পৃক্ত থাকায় সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। এ দাবিতে গত সপ্তাহেও রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে শত শত চাকরিপ্রত্যাশী শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে শহরের গুরত্বপূর্ণ এ মোড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এই দাবিতে বিভিন্ন সময়ে অবস্থান, ঘেরাও, গণঅনশন ইত্যাদি কর্মসূচি পালিত হয়। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ নিয়ে সংসদে আলোচনাও হয়েছে। তখন সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে জানিয়েছিলেন তৎকালীন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হেসেন। গত ৩ জুলাই সংসদে তিনি বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো হলে বিভিন্ন পদের বিপরীতে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। ফলে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে ৩০ বছরের কম বয়সি প্রার্থীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি বলেছিলেন, বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশনজট নেই। আগে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের সেশনজট থাকলেও বর্তমানে উল্লেখযোগ্য কোনো সেশনজট নেই বললেই চলে। শিক্ষার্থীরা ১৬ বছরে এসএসসিসহ ২৩-২৪ বছরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে থাকে। চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর হওয়ার ফলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পরও তারা চাকরিতে আবেদনের জন্য কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ বছর সময় পেয়ে থাকে। এছাড়া ৩০ বছর বয়সমীমার মধ্যে একজন প্রার্থী আবেদন করলে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে এক-দুই বছর লেগে যায়। ফলে চাকরিতে যোগদানের জন্য ন্যূনতম বয়স ৩০ বছর থেকে ৩৫ করার যে দাবি করা হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে তার কাছাকাছি পর্যায়ে উপনীত হয়।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের রিপোর্টের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় বিভিন্ন স্তরে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের বয়স ও জেন্ডারভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী কম বয়সি (২৩-২৫) সুপারিশকৃত প্রার্থীর সংখ্যা সব থেকে বেশি (৩৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ) এবং বেশি বয়সি (২৯-এর ঊর্ধ্বে) সুপারিশকৃত প্রার্থীর সংখ্যা সব থেকে কম (এক দশমিক ৭১ শতাংশ)।
তিনি জানান, চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা ৫৭ বছর থেকে ৫৯ বছরে উন্নীত হওয়ায় বর্তমানে শূন্যপদের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই কমে গেছে। এ প্রেক্ষাপটে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হলে বিভিন্ন পদের বিপরীতে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। এসব শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই।
তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দেড় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হলো। এই উদ্যোগ ৩৫ বছর বয়সপ্রত্যাশীদের মধ্যে নিঃসন্দেহে আশার সঞ্চার করবে।
মুতাসিম বিল্লাহ নামে এক আন্দোলনকারী বলেন, আলহামদুলিল্লাহ্, আমাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে চাকরিতে বয়স ৩৫ করার প্রস্তাব এসেছে। এটি গেজেট হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলনে থাকব। তবে অবসরের বয়সসীমা নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি আছে, প্রশ্ন আছে; সেগুলো বিষয়ে আপাতত যেহেতু একটা প্রবেশের দ্বার উন্মুক্ত হলো, সেজন্য এ বিষয়ে আমরা প্রশ্ন তুলতে চাই না।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস হাসানুল বান্না বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ এবং অবসরের বয়সসীমা ৬৫ করার যে প্রস্তাব করা হচ্ছে, তার বিরোধিতা করছি। আমি মনে করি বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিবেচনায় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা তুলে দেয়া হোক বা সেটা বাড়িয়ে ৪০-৪৫ বছর করা যেতে পারে। এতে জীবনের যে কোনো পর্যায়ে সরকারি চাকরি করার ইচ্ছা পূর্ণ করার সুযোগ থাকবে। এতে মেধা, শ্রম, অর্থ আর সময়ের অপচয় থেকেও বেঁচে যাবে রাষ্ট্র। বর্তমান বেকারত্বের হার বিবেচনায় অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করি। শতভাগ কর্মসংস্থান নিশ্চিতের পরই কেবল অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো যেতে পারে।