গ্রেপ্তারের তালিকায় ৯০ পুলিশ কর্মকর্তা, বরখাস্ত হচ্ছেন ১৮৭

গ্রেপ্তারের তালিকায় ৯০ পুলিশ কর্মকর্তা, বরখাস্ত হচ্ছেন ১৮৭

শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ ৯০ পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তারের তালিকায় রয়েছেন। এছাড়া বাহিনীটির আরো ১৮৭ সদস্য বরখাস্ত হচ্ছেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

এতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচারে হামলা ও গুলি করে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং নিরীহ লোকজনকে হত্যার অভিযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হয়েছে পুলিশের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। বেশিরভাগ মামলার আসামিই আছেন আত্মগোপনে। ইতোমধ্যে সাবেক দুই আইজিপিসহ অন্তত ১০-১২ জন পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন।

তাতে বর্তমান ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা ভুগছেন গ্রেপ্তার আতঙ্কে। সাবেক ও বর্তমান অন্তত ৯০ জন পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তারের তালিকায় আছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে। তাছাড়া অনুপস্থিত কর্মকর্তা ও সদস্যদের বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

Google News গুগল নিউজে ভোরের কাগজের খবর পড়তে ফলো করুন

গত জুলাই-আগস্টের পর অনুপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যদের এরই মধ্যে কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবু কাজে যোগ দিচ্ছেন না তারা। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এখনো ১৮৭ জন অনুপস্থিত আছেন কর্মস্থলে। এই সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। মূলত তারাই বরখাস্ত হতে পারেন।

এ নিয়ে সরকারের হাইকমান্ডে বিশদ আলোচনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের নিয়ে বৈঠক করেছেন উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও সিনিয়র সচিব। আত্মগোপনে থাকা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করার বিষয়ে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গত সোমবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশের যেসব সদস্য এখনো যোগ দেননি, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ওদের আমরা পুলিশ না, ক্রিমিনাল বলব। আমরা আনসার, পুলিশ ও বিজিবি নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশে নিয়োগ শুরু হবে।

পুলিশ সূত্র জানায়, সাবেক আইজিপি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যায়ের ১৮৪ কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। সর্বাধিক অর্ধশত মামলা হয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে হয়েছে ৩৭ মামলা। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে হয়েছে ৪১টি মামলা।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২৯টি। উপপরিদর্শক বা এসআইদের মধ্যে ডিবির এসআই অমিতাভ দর্জির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চারটি মামলা হয়েছে। এসব মামলা হয়েছে ৫ আগস্ট ও এর আগে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলা।

সাবেক আইজিপি শহীদুল হকের বিরুদ্ধে করা হয়েছে সাতটি মামলা। অপর সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে হয়েছে তিনটি মামলা। ডিএমপির সাবেক কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে হয়েছে একটি মামলা। এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঢাকায় হয়েছে ১১টি মামলা। সিআইডির মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে হয়েছে দুটি মামলা। র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে পাঁচটি। পুলিশ সদর দপ্তরের বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া অতিরিক্ত আইজি লুৎফুল কবীরের বিরুদ্ধে একটি।

সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে হয়েছে দুটি, পুলিশ সদর দপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি জামিল আহমেদের বিরুদ্ধে একটি, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার মহিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুটি, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেনের বিরুদ্ধে একটি, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুটি, সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে পাঁচটি, সাবেক ডিআইজি রিপন সরদার ও খালিদ হাসানের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা হয়েছে।

অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ার্দারের বিরুদ্ধে পাঁচটি ও ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে আটটি মামলা হয়েছে। এ রকম ঊর্ধ্বতনদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। আসামিদের মধ্যে বেশিরভাগই আছেন আত্মগোপনে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন গুলি চালাতে। আর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছেন মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। যারা এসব ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তার মধ্যে সাবেক কর্মকর্তাও আছেন। সব মিলিয়ে ৯০ জনের মতো গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মামলায় পুলিশের যেসব চিহ্নিত আসামি, তাদের ধরতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। তা ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় ১৮৭ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে। চলতি মাস থেকেই তা বাস্তবায়ন হতে পারে। ইতিমধ্যে সাবেক দুই আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও এ কে এম শহীদুল হক, ডিবির ডিসি মশিউর রহমান, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লাহিল কাফী, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান, সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন শিপন ও এসি ইফতেখারকে গ্রেপ্তার করা হ

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ