নির্বাচনমুখী সরকার ইসি গঠনে সার্চ কমিটি চূড়ান্ত প্রধান হচ্ছেন বিচারপতি জুবায়ের

নির্বাচনমুখী সরকার ইসি গঠনে সার্চ কমিটি চূড়ান্ত প্রধান হচ্ছেন বিচারপতি জুবায়ের

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনমুখী হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। চূড়ান্ত হয়েছে নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সই হওয়ার পর যে কোনো সময়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যাত্রা শুরু হয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের সুপারিশ তৈরি করতে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির প্রধান হিসেবে আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে মনোনীত করেছেন প্রধান বিচারপতি। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামানকে মনোনীত করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সুপারিশ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এ সংক্রান্ত আইনে সার্চ কমিটির প্রধান হিসেবে প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি এবং সদস্য হিসেবে হাই কোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতিকে রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠন হয়ে গেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সই হওয়ার পর বুধবারের মধ্যে প্রজ্ঞাপন হয়ে যাবে। গতকাল সচিবালয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্কের সঙ্গে বৈঠকের পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সার্চ কমিটি কত সদস্যের হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, আইনে যা বলা আছে, তাই হবে। তিনি আরও বলেন, ভোটার তালিকা নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন রয়েছে। বিগত নির্বাচনগুলোই ছিল ভুয়া। তাই ভোটার তালিকা নিয়ে তেমন কথা হয়নি। এবার ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে। একটি স্বচ্ছ ভোটার তালিকা করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুন্দর নির্বাচন দেবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

নির্বাচন দিতে কত সময় লাগবে, তা অনেকগুলো ‘ফ্যাক্টর’ এর (বিষয়) ওপর নির্ভর করবে বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, একটি রাজনৈতিক দল হাজার মানুষ হত্যা করে, হাজার হাজার মানুষকে অঙ্গহানি করে। এখনো তাদের নেত্রী দেশের বাইরে বসে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কথা বলেন, অন্য দেশে বসে ২৮৭ জনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। তিনি একজন গণহত্যা মামলার আসামি। তাদের বিচারের আগে নির্বাচনে আসা, মানুষ মেনে নেবে বলে আমার মনে হয় না। আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা বিবেচনা করে দেখেন, এমন গণহত্যা চালানোর পরও তিনি দেখে নেওয়ার কথা বলেন, আমাদের নেতাদের কিশোর গ্যাং বলেন। এ দলের রাজনৈতিক অধিকার থাকা উচিত কি না, তা দেশের মানুষ বিবেচনা করবে। ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাসের মাথায় ৫ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) পদ থেকে কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা পদত্যাগ করেন। এরপর নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়নি। প্রায় দুই মাস নির্বাচন কমিশন শূন্য রয়েছে। ইসি সচিবের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় রুটিনওয়ার্ক চললেও অনেক কাজ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। ইসি শূন্য থাকায় সম্প্রতি আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের গেজেট প্রকাশ করেছে ইসি সচিবালয়। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, আইনি বাধ্যবাধকতার অংশ হিসেবে প্রতি বছরের ২ জানুয়ারি ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করা হয়। তার আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হয় ইসিকে। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনের আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে ইসিকে। আইন অনুযায়ী ভোটার তালিকা হালনাগাদের খসড়া ও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দায়িত্বও ইসির। ফলে কমিশন না থাকায় এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি ইসি সচিবালয় নিতে পারছে না। উল্লেখ্য, ইসি নিয়োগে ২০২২ সালের আগে কোনো আইন ছিল না। কিন্তু ২০১২ সালে এবং ২০১৭ সালে পরপর দুবার সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এর মধ্যে ২০১২ সালে কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়। একইভাবে ২০১৭ সালে সার্চ কমিটি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন গঠন করে গত আওয়ামী লীগ সরকার। পরে ২০২২ সালে ওই সার্চ কমিটি গঠনের বিধান রেখে ইসি নিয়োগে আইন করা হয়। ওই আইনে ২০১২ ও ২০১৭ সালে গঠিত সার্চ কমিটির বৈধতা দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের সেই আইন অনুযায়ী কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ পায়।

যা আছে আইনে : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ এর ৩ ধারা অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করার উদ্দেশে ছয়জন সদস্যের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। সদস্যের মধ্যে থাকবেন- প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক, যিনি অনুসন্ধান কমিটির সভাপতিও হবেন, প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত হাই কোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, বাংলাদেশের মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক, যাদের একজন হবেন নারী। অনুসন্ধান কমিটি তার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করবে। তিন সদস্যের উপস্থিতিতে অনুসন্ধান কমিটির সভার কোরাম গঠিত হবে। সভায় উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে এবং ভোটের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী সদস্যের দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। এই কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবে।

অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্ব ও কার‌্যাবলি : আইনের ৪ ধারায় কমিটির দায়িত্ব ও কার‌্যাবলি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অনুসন্ধান কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে এবং এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিন্নতা, সততা ও সুনাম বিবেচনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের উদ্দেশে এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অনুসন্ধান করবে এবং এজন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রতিটি শূন্যপদের বিপরীতে রাষ্ট্রপতির কাছে দুজন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে কমিটি।

জাতীয় রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ