নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দুর্নীতির আইকনে পরিণত হয়েছিলেন ঢাকা ওয়াসার সাবেক বিতর্কিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করে প্রকল্প থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হলেও তাকসিম অধরাই থেকে গেছেন। অনেকেই বলছেন, প্রশাসনের ছত্রছায়ায় তিনি দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে দেশ ছাড়ার নানান কৌশল খুঁজছেন তিনি।
গত ২০ আগস্ট ৬০ দিনের জন্য ঢাকা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সর্বশেষ গত বুধবার তার বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেনের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান লাপাত্তা। এরপর আট কর্মদিবস অফিস করেননি তিনি। সর্বশেষ গত ১৫ আগস্ট অনলাইনে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন তাকসিম। তাতে অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি আর দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না বলে উল্লেখ করেন। এরপর থেকে তিনি কোথায় আছেন তা অস্পষ্ট। কেউ বলছেন দেশে আছেন আবার কেউ বলছেন বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। তবে কয়েকটি সূত্র বলছে, তাকসিম এ খান এখনো দেশেই আছেন। শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার শুরুর দিকে তিনি টিকে থাকার চেষ্টা করলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি ঢাকাতেই ছিলেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তাকসিম এ খান একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আশ্রয়ে আছেন বলে জানা গেছে। সুযোগ বুঝে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কারণ, তিনিসহ পুরো পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তাঁর স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বাস করছেন। ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেয়েছিলেন তাকসিম এ খান। এরপর দফায় দফায় মেয়াদ বাড়তে থাকে তার। এর মধ্যে তার অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। কিন্তু তাকে সরানো যায়নি। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে সপ্তমবারের মতো ওই পদে আরও তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি। তাকসিমের আমলে ঢাকা ওয়াসায় বৈদেশিক ঋণের টাকায় কয়েকটি বড় প্রকল্প নেওয়া হয়। এর ফলে ঢাকা ওয়াসাকে ঋণের সুদ ও আসলের কিস্তি পরিশোধে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি এবং বাস্তবায়নের পর তা চালু করতে না পারায় সংস্থাটির ব্যয় বেড়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, যদি দ্রুত কাজ করে প্রকল্প ভালোভাবে কাজে লাগানো যেত তবে ওয়াসার সেবায় পরিবর্তন সম্ভব ছিল। যা কাজ হয়েছে তাতে পানি ব্যবস্থাপনায় ২০০৯ সালের তুলনায় সেবার মান বেড়েছে। যদিও পানির দামও বেড়েছে ১৪ বার। এখনো পানি ঘাটতি প্রায় ৪০ কোটি লিটার। এদিকে গত রবিবার ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এ কে এম শহিদ উদ্দিন (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) ও মো. আকতারুজ্জামানকে (ফিন্যান্স) ওয়াসা ভবন থেকে বের করে দিয়েছেন বিএনপিপন্থি শ্রমিক-কর্মচারীরা। এ ঘটনার আগে কর্মচারীরা ওই দুই কর্মকর্তাকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার এবং ঢাকা ওয়াসার সাবেক এমডি তাকসিম এ খানের দোসর হিসেবে অভিযুক্ত করেন।