অনলাইন ডেস্ক
রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে সংযুক্ত থাকা ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলামসহ চার পুলিশ কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে।শুক্রবার ও শনিবার পৃথক অভিযানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদেরকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শনিবার রাতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের এক ডিআইজি ও তিন পুলিশ সুপারকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে তাদের আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।তারা বিষয়টি দেখছে।
আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রয়েছে বলেও জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
জানা গেছে, আটকদের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহী সারদা একাডেমিতে সংযুক্ত থাকা গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও আবুল হাসনাত এবং নীলফামারীর ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান।
পুলিশ সূত্র জানায়, আটক ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম গাজীপুর মেট্রোপলিটনের সাবেক কমিশনার ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে গুম-খুনসহ অনৈতিকভাবে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
সরকার বদলের প্রেক্ষাপটে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে বল প্রয়োগের অভিযোগে পুলিশের আলোচিত অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে সারাদেশে হত্যা মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে এসব মামলায় পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ও শহীদুল হকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত ২৮ সদস্য গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। এর মধ্যে ডিআইজি মোল্যা নজরুলসহ মোট চার পুলিশ কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার তথ্য এসেছে পুলিশের পক্ষ থেকে। গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মোল্যা নজরুল সবশেষ সিআইডিতে কর্মরত ছিলেন।
সরকার বদলের পর পুলিশে বদলি, পদোন্নতি, বাধ্যতামূলক অবসর ও চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৭ অক্টোবর মোল্যা নজরুলকে সারদা পুলিশ একাডেমিতে সংযুক্ত করা হয়। এর আগে তিনি গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ডিআইজি, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশসহ (ডিবি) পুলিশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৩ সালের এপ্রিলে মোল্যা নজরুল ঢাকা ডিবির উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) থাকার সময় তার বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে এক কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করা হলে ওই পদ থেকে তাকে সরিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। তবে একই বছরের ১২ নভেম্বর ঘুষগ্রহণের সম্পৃক্ততা ‘না পাওয়ায়’ নজরুলকে দায়মুক্তি দেয় দুদক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান কুমিল্লা ও সিলেটে এসপি থাকাকালে নির্বাচন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেআইনি শক্তি প্রয়োগ করেন। আবুল হাসনাত বাগেরহাটের পুলিশ সুপার থাকাকালে ২০২৪ সালের নির্বাচন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন এবং আসাদুজ্জামান নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন। তারা নির্বাচন ও পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শক্তি প্রয়োগ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে ব্যাপক সমালোচিত ছিলেন।