জোরালো হচ্ছে নিষিদ্ধের দাবি আওয়ামী লীগের নিবন্ধনও বাতিলের দাবি, কফিনমিছিল

জোরালো হচ্ছে নিষিদ্ধের দাবি আওয়ামী লীগের নিবন্ধনও বাতিলের দাবি, কফিনমিছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি ক্রমে জোরালো হচ্ছে। দলটি নিষিদ্ধে বর্তমানে জোরালো দাবি তুলছেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। একই সুর গণঅধিকার পরিষদ ও হেফাজতে ইসলামের মুখেও। কেউ কেউ নিবন্ধন বাতিলের দাবিও করছেন। দলটি নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার ঢাকাসহ সারা দেশ পৃথক কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় সংগঠনের আহ্বায়ক নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা যদি আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলে এ নির্বাচনের আগেই সচেষ্ট না হই, তাহলে জনগণের সামনে গভীর সংকট অপেক্ষা করছে। নিষিদ্ধ না করলে বাংলাদেশকে একটি গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে।’

ঢাবিতে কফিনমিছিলে ‘ব্যান ব্যান, আওয়ামী লীগ’ স্লোগান : গতকাল বাদ জুমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে নিহত মো. হাসানের (১৯) লাশ নিয়ে কফিন মিছিল বের হয়। দীর্ঘ সাত মাস পর তার লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ভিসি চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। এ সময় তারা- ‘ব্যান ব্যান, আওয়ামী লীগ’; ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। হাসানের বাবা মো. মনির হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে গত ৫ আগস্ট হারিয়ে যায়। পরে তাকে হাসপাতাল, ক্লিনিক, কবরস্থান, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামসহ সব জায়গায় খুঁজি, কিন্তু কোথাও পাই না। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে যাই। কাপড়চোপড় দেখে ছেলের লাশ শনাক্ত করি।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘এখনো বিপ্লবীদের রক্ত ঝরছে, অনেকে শহীদ হচ্ছেন। আমরা চাই, আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। কেউ যদি অন্য কিছুর দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করে তবে প্রয়োজনে আরও ২ হাজার জীবন দেব। তবুও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার লড়াই চালিয়ে যাব।’

গাজীপুরে কফিন মিছিল থেকে নিষিদ্ধের দাবি

গাজীপুরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হাতে নিহত আবুল কাশেম হত্যার প্রতিবাদ এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে কফিন মিছিল করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিরা। গত বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। এর আগে শহীদ মিনার চত্বরে নিহত কাশেমের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তারা নানা স্লোগান দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল জোবায়ের বলেন, ৫ তারিখে আওয়ামী লীগ পালানোর পর থেকে আমার ভাইদের গুপ্তহত্যা চালানো হচ্ছে। আমরা এখনো ঘরে ফিরে যাইনি। স্পষ্টভাবে আমরা বলতে চাই, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।

গণঅধিকার পরিষদের হুঁশিয়ারি

দুই সপ্তাহের মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করলে যমুনা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। গতকাল গণহত্যার বিচার ও গণহত্যাকারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধী বিক্ষোভ ও গণমিছিলে অংশ নিয়ে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ছয় মাস হয়ে গেল এখনো আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। অতি দ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’

নিষিদ্ধ চায় হেফাজতে ইসলাম

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের শীর্ষ নেতারা। গতকাল বিকালে সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী সংবাদমাধ্যমে প্রেরিত এক যৌথ বিবৃতিতে হেফাজতের কেন্দ্রীয় আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান এ দাবি জানান। বিবৃতিতে তারা বলেন, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো তথ্য-প্রমাণসহ উঠে এসেছে। হাসিনার পরিকল্পনা ও নির্দেশে তার আজ্ঞাবাহী বাহিনীর সদস্যরা গুম-খুনে ও নির্যাতনে নৃশংসতার সব সীমা ছাড়িয়েছে। তারা আরও বলেন, পিলখানা হত্যাকা-, গুম-খুন, ৫ মে ও চব্বিশের গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ