নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের কোনো ধরনের পরিকল্পনা হলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, ফ্যাসিজমের যত দোসর ও সুবিধাভোগী রয়েছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে কখনো আরেকটি এক-এগারো হতে দেওয়া হবে না।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বকশীবাজারে কারা কনভেনশন সেন্টারে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে ইফতার ও দোয়া মাহফিলে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে কেবল আওয়ামী লীগকেই বিদায় করা হয়নি উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৩ আগস্ট শহীদ মিনারে আমরা বলেছিলাম, আওয়ামী লীগ এবং এই ফ্যাসিবাদী ১৫ বছরের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই এক-এগারোর বন্দোবস্ত থেকে। সেই এক-এগারোর বন্দোবস্তের ফলশ্রুতিতেই কিন্তু আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ক্ষমতা পেয়েছিল। আরেকটি এক-এগারো আমরা কখনো বাংলাদেশে হতে দেব না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আমরা বলেছিলাম, ছাত্র-জনতার সমর্থিত সরকারকেই অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।’
কোনো ধরনের বিরাজনীতিকরণ এবং সামরিকীকরণের চেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি, রাজনৈতিক শূন্যতা থেকে সামরিক হস্তক্ষেপ হয়েছে। এর ফলাফল কখনোই গণতন্ত্রের জন্য ভালো হয়নি। তাই আমরা মনে করি, একটি গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে, যেখানে জনগণ জেগে উঠেছে। জনগণ নিজের সিদ্ধান্ত, নিজের মালিকানা নিজে বুঝে নিতে চায়। জনগণের সেই মালিকানা, সেই অধিকার তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র এবং পরিকল্পনার কথা আমরা বিভিন্ন জায়গায় শুনতে পাচ্ছি। আমরা খুবই স্পষ্টভাবে বলেছি এবং আজকের এই অনুষ্ঠান থেকে আবারও বলে দিতে চাই, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের কোনো ধরনের পরিকল্পনা করলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, ফ্যাসিজমের যত দোসর রয়েছে, সুবিধাভোগী রয়েছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আমরা নিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
গত ১৫-১৬ বছর সেনাবাহিনী, পুলিশ, আমলাতন্ত্রসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দলীয়করণ এবং আওয়ামীকরণ হয়েছে বলেও মনে করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগণের বিরুদ্ধে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে বারবার ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি মানবতাবিরোধী অপরাধ, গুম-খুনের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের লোকগুলো জড়িত।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখেছি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশকে কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা তারপরও বলেছি, আমরা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নই, প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমাদের পুনর্গঠন করতে হবে, দাঁড় করাতে হবে। কিন্তু যারা এর সঙ্গে জড়িত, সেই জড়িতদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে থাকতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতর যদি আওয়ামী দোসররা থাকে, যারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে, তাদের কঠোর বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
এ সময় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণ করেন এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করেন নাহিদ ইসলাম।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এনসিপির লালবাগ জোনের সদস্য হোসেন মোহাম্মদ আনোয়ার। এ সময় এনসিপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারাও বক্তব্য দেন।