নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তমাল মনসুরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলায় তমাল মনসুরের বিরুদ্ধে ৬৭ কোটি ৬৩ লাখ ৩৭ হাজার ২৭০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার তিনটি ব্যাংক হিসাবে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার টাকার লেনদেনের অভিযোগও আনা হয়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক বলেন, তমাল মনসুরের নামে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে ১৪টি অ্যাপার্টমেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৬৩ কোটি ৯৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
বিদেশে সম্পদের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, আমেরিকার নিউইয়র্কের স্ট্রিট জ্যামাইকায় আফতাব স্কাইভিউ টাওয়ারে ৪৯ লাখ ৬০ হাজার ডলারের অ্যাপার্টমেন্ট, জ্যামাইকার ১৪৮ স্ট্রিট বিটুইন ৮৯ অ্যাভিনিউয়ে বহুতল ভবনে ১৯ লাখ ৬০ হাজার ডলারের বিনিয়োগ, নিউইয়র্কের লট জ্যামাইকায় ১৪ লাখ ২০ হাজার ডলারের বিনিয়োগের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। সব মিলিয়ে ৮৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার বা ৬৩ কোটি ৯৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার সম্পদ (১ ডলারে ৭৫-৭৭ টাকা হিসাবে) থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা; মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২)(৩) ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর তমালের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। সেই সময় তার বিরুদ্ধে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ১৭৫ কোটি টাকার সরকারি ক্রয়ে নি¤œমানের
মালামাল সরবরাহ করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের কথা জানায় দুদক।
আশরাফুল আলম খোকনের সাড়ে ১৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ
প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব-১ মুহাম্মদ আশরাফুল আলম খোকনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুদক। দুদকের মহাপরিচালক এটি নিশ্চিত করেছেন। প্রথম মামলায় আশরাফুল আলম খোকনের বিরুদ্ধে ১৩ কোটি ৩৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮২৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার ৩টি ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ৩৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা সন্দেহজনক লেনদেন ও পাচার করে আমেরিকার নিউইয়র্কে বাড়ি ক্রয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। দ্বিতীয় মামলায় তার স্ত্রী রেজওয়ানা নূর ও খোকনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় ৩ কোটি ৮ লাখ ৮১ হাজার ৫৬৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার স্ত্রীর ৩টি ব্যাংক হিসেবে ৬ কোটি ১৩ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪৭ টাকার লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা; মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২)(৩) ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর খোকনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ৯ অক্টোবর তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। অনুসন্ধানের ভিত্তিতে দুদক বলছে, যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিকত্ব রয়েছে খোকনের। তিনি ২০১৩ সালের ১৮ আগস্ট শেখ হাসিনার উপ-প্রেস সচিব পদে চুক্তিতে যোগ দেন। পরে বিভিন্ন সময় তার মেয়াদ ও গ্রেড বাড়ানো হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার করা অব্যাহতির আবেদন গ্রহণ করে ছুটিতে পাঠানোর খবর পাওয়া যায়। আশরাফুল আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেন। তিনি দীর্ঘদিন চ্যানেল আইয়ে কর্মরত ছিলেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলায় আহতও হয়েছিলেন তিনি। ক্যাম্পাস জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন খোকন।