ট্রাম্পের হঠাৎ ইউটার্ন ♦ সব দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক তিন মাস স্থগিত ♦ শুধু চীনের জন্য বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ ♦ বাংলাদেশে স্বস্তি

ট্রাম্পের হঠাৎ ইউটার্ন ♦ সব দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক তিন মাস স্থগিত ♦ শুধু চীনের জন্য বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ ♦ বাংলাদেশে স্বস্তি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

বিশ্ববাণিজ্য টালমাটাল করে দেওয়া পাল্টা শুল্ক থেকে আপাতত সরে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিভিন্ন দেশের ওপর নতুন করে যে শুল্ক আরোপ করেছিলেন তা একমাত্র চীন বাদে অন্য দেশগুলোর জন্য তিন মাস স্থগিত করেছেন। অন্য দেশগুলোকে ছাড় দিলেও চীনা পণ্যের ওপর মোট শুল্কের পরিমাণ ১০৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১২৫ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের জবাবে চীন মার্কিন পণ্যে ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্তকে অনেকটা ইউটার্ন হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ওপর গত সপ্তাহে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিলেন তিনি। স্থগিতের সিদ্ধান্তে স্বস্তি পাবেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘চীন বিশ্বের বাজারগুলোর প্রতি শ্রদ্ধার যে ঘাটতি দেখিয়েছে, তার ভিত্তিতে আমি যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ ধার্য করছি। এটা অবিলম্বে কার্যকর হবে। ‘আশা করি নিকট ভবিষ্যতে চীন ও অন্যান্য দেশ উপলব্ধি করতে পারবে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণার দিন আর থাকবে না বা গ্রহণযোগ্য হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আরও লিখেছেন, ‘প্রকৃত অবস্থার ভিত্তিতে ৭৫টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এসব প্রতিনিধির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ, অর্থ বিভাগ ও ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) রয়েছে। দেশগুলো বাণিজ্য, বাণিজ্য বাধা, শুল্ক, মুদ্রা কারসাজি ও অশুল্ক বাধা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে সমঝোতা আলোচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে চীন বাদে অন্য সব দেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘আমি ৯০ দিনের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত অনুমোদন করেছি। একই সঙ্গে এ সময়ের জন্য পাল্টা শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। এটাও অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য সরবরাহে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেত। সেই সুযোগ রাখা হয়নি। বিশ্বের সব দেশকে ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে মার্কিনিদের কাছে পণ্য পাঠাতে হবে। বাংলাদেশি পণ্যে আগে থেকেই গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের জবাবে চীন মার্কিন পণ্যে ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। আজ থেকে এ শুল্ক কার্যকর হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ১০৪ শতাংশ শুল্ককে নিপীড়নমূলক আখ্যা দিয়ে তারা এই শুল্ক আরোপ করেছে। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ৮৪ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছে। চীন বলেছে, ‘চীনকে চাপ বা হুমকি দিয়ে কখনোই লাভ হবে না।’ চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও সাফ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়বে তারা এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘ব্ল্যাকমেলিং আচরণ’ তারা কখনোই মেনে নেবে না। চীনের অবস্থান হলো- শুল্ক আরোপের এই পরিকল্পনা প্রত্যাহার করা হোক এবং দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার মত-পার্থক্যের সমাধান করা হোক। এদিকে পাল্টা-পাল্টি শুল্কারোপের এই ঘটনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে আবারও বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করছেন তারা। খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া। এদের ওপর শুল্কের হার যথাক্রমে ১০৪ শতাংশ, ৪৬ শতাংশ ও ৪৯ শতাংশ।

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ সংবাদ